ঢাকাশুক্রবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

ডিমলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষক কৃষাণী

রুহুল আমিন
মে ১৬, ২০২২ ১০:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নীলফামারী ডিমলা উপজেলায় এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে বিশেষ করে চরাঞ্চলে। বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষক। চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে এ উপজেলায় দ্বিগুণ ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

ডিমলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ বছর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর চরাঞ্চল এলাকার তিস্তা নদী বেষ্টিত নদীর ওপারে চরের জমিতে উৎপাদন ১১-১২ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই  খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলা, মেশিনে ভুট্টা আলাদা করা, ভুট্টা সংগ্রহের পর গাছ কেটে পরিস্কার করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বাড়ির উঠানে  চোখে পড়ছে নারীদের রোদে ভুট্টা শুকানোর দৃশ্য। কোন কোন বাড়ির সামনে তারা রোদে শুকাচ্ছেন ভুট্টার ডগা ও ডালপালাগুলো। এসব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশু লালন-পালন বেড়েছে। আর মাছের ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ছে ভুট্টার। তাই ভুট্টার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। এ কারণে দামটাও পড়ে যাচ্ছে না। চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ভুট্টার দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন  তাই তার বেজায় খুশি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার মাঠে মাঠে ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে চোখে পড়ার মত। টেপা খরিবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি গ্রামে ভুট্টা রোদে শুকাচ্ছিলেন কয়েকজন নারী।

জানতে চাইলে তারা বলেন, জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। এটা একদিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর বিক্রি করা হয়। তাদের ভুট্টা শুকাতে দেখে বাড়ির ওপরই ফড়িয়ারা কিনতে আসছেন। কেনার জন্য দামও বলছেন ফড়িয়া জব্বার আলী।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশ পুকুর গ্রামের ভুট্টাচাষি রুহুল আমিন (৪০) বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ভালো বাজারে দামও চড়া। এখন প্রতিমণ ভুট্টা ১২৮০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি ১২ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩৬ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তাই গতবারের চেয়ে এবার লাভের আশা বেশি করছেন তিনি।

গয়াবাড়ী (শুটিবাড়ি বাজার) এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক (৫০)। জমিতে শ্রমিকদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভুট্টা তোলায়। তিনি জানান, নিজের আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। শুরুতে তিন কেজি বীজ লেগেছিল। বীজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। জমিতে ৩-৪ বার দিতে হয়েছে সেচ। এখন ভুট্টা তোলার সময় আটজন শ্রমিককে ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দিতে হবে। সবমিলিয়ে তার খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তারপরও ভুট্টা বিক্রি করে তার ভালো লাভ থাকবে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক রাশেদ খান বলেন, তার এই জমিতে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে। নিজের জমি না হলে খরচ আরেকটু বাড়ত। আড়াই বিঘা জমিতে একটা ফসল করার জন্য ইজারা নিলে ১৩ হাজার টাকার মতো লাগত। এই খরচ না হওয়ায় তার লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে। তবে যারা জমি ইজারা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন, এবার তাদেরও ক্ষতি হবে না। ফলন বেশি হওয়ায় সবাই লাভ করবেন।

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ঝাড় সিংহেশ্বর গ্রামের ভুট্টাচাষি মমতাজুল ইসলাম জানান, চরে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হচ্ছে এক বিঘা জমিতে। তবে তিস্তা নদী পার করে ফড়িয়ারা ভুট্টা নিয়ে যান বলে তাদের এলাকায় দাম একটু কম। তারপরও ফলন বেশি হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না। তবে আরেকটু দাম বেশি হলে আরও ভালো হতো। আমরা আরও বেশি লাভ করতে পারতাম।

এদিকে ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কাজী ফার্ম, নারিশ লিঃ আমান, আর আর পি লিঃ, সি পি লিঃ  সি পি লিঃ  আফতাব ফার্ম, নাসির গ্রুপসহ একাধিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী জানালেন, চরাঞ্চল থেকে ফড়িয়ারা ভুট্টা কিনে এনে তাদের গুদামে বিক্রি করছেন। এছাড়া অনেক কৃষক নিজেরাই ভুট্ট বিক্রি করে যাচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠানে। এসব ভুট্টা কিনে গুদামে রাখছি এবং দেশের অন্যান্য জায়গার গুদামে এই ভুট্টা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকে করে ভুট্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. সেকেন্দার আলী জাগো বুলেটিন কে বলেন, এ উপজেলায় গেল কয়েক বছর ধরেই ভুট্টার চাষ বাড়ছে। তাই চাষিরা যেন ভালো বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর ভালো বীজের কারণে ভাল উৎপাদনও হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ‘স্বল্প সময়ে ভালো লাভ দেখেই চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছরও ভুট্টার বাজার ভালো। সামান্য একটু ঝড়-বৃষ্টি ব্যতিরেখে সার্বিকভাবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও হয়েছে ভালো। আমরা আশা করছি আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com