লেপ-তোষক তৈরীর কারিগররী পেশা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঐতিহ্য পেশা। এখন শীত আসলে কারিগররা লেপ-তোষক বানাচ্ছে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বাহারি কম্বল আর ম্যাট্রেসের দাপটে হারিয়ে গেছে লেপ-তোষকের কদর। আর এই সময় ও রুচির মধ্যস্থতায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া লেপ-তোষকের ব্যবসায়ী ও কারিগররা। দীর্ঘদিনের এ ব্যবসাকে না পারছে ছেড়ে দিতে না পারছে ধরে রাখতে। তাদের কারো কাছে এটা ঐতিহ্যে আবার কারোর জন্য এটাই একমাত্র উপার্জনের উৎস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা কেউ স্মার্ট ফোনের মধ্যে লুডু কেউবা আমার পুরোন গল্পে মগ্ন হয়ে সময় পার করছেন। দোকানগুলিতে নেই তেমন কোনো ভীড়। ব্যবসায়ীরা বসে বসে দিন কাটাচ্ছে, নেই কোনো কাষ্টমার। দুই একদিন পরপর বড়জোর একটা থেকে দুইটা কাষ্টমার পাওয়া যায়। তাও মাথার বাঁলিশ তৈরীর কাস্টমার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে তুলার তৈরী লেপ-তোষকের চাহিদা। মানুষ এখন কম্বল আর ম্যাট্রেসের দিকে ঝুঁকছেন।
জানতে চাইলে সাভার বাজার রোডে লেপ-তোষক ব্যবসায়ী ইসমাইল মিয়া জানান, লেপ তোষাকের চাহিদা এখন আর নাই মানুষের মধ্যে। এখন কম্বল আর কমফোর্টারই ব্যবহার করে মানুষ। তুলার চাহিদা আর নাই মানুষের। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ২৫০ গ্রাম তুলা বিক্রি হইছে। আগের একটা সময় ১০টা ১৫টা করে লেপ বানাইতাম। এখন তো কাজই নাই। কেউ আর আগের মতো লেপ তোষক বানায় না। এখন শুধু বালিশ বানায়।
তিনি আরও বলেন, ৬০ বছর যাবত এই ব্যবসায় জরিত। আগে মানুষ লেপ তোষক বানানো জন্য বসে থাকতো। আর এখন কোন রকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আগের মতো নাই আর আমাদের ব্যবসা। এখন সবই পাওয়া যায় মার্কেটে। গত ৪-৫ বছর যাবত আমাদের ব্যবসার লসের দিকে যাচ্ছে। ১ দিন কাজ করলে ৪ দিন বসে থাকতে হয়। সরকার আমাদের একটা নিদ্রিষ্ট যায়গা করে দিলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারবো।
লেপ-তোষক তৈরীর ব্যবসায়ী হুমায়ুর কবীর বলেন, মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা নাই। দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ছে, এতে মানুষ আর লেপ তোষক বানাতে চায় না। এখন তো বাজারের বিভিন্ন ধরণের আইটেম বের হয়ে গেছে। লেপ এর বদলে কম্বল কিনে, দামও কম। লেপের খরচ বেশী, কম্বলে খরচ কম। তাছারা লেপের থেকে কম্বল দেখতে সুন্দর বেশী। আগের মতো করে সেই চাহিদা নেই এখন আর। এক সময় শীত থাকতো টানা ৩ মাসেরও বেশী। এখন সেই শীত ১ মাসেই শেষ।
সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার লেপ-তোষক কারিগরেরা জানান, এখন কম্বল আর ম্যাট্রেসের কারণে আমাদের ব্যবসা অনেকটা নাজেহাল অবস্থা। এখন আর কেউ শিমুল তুলার বালিশ তৈরী করতে আসে না সবাই ফোমের বালিশ কিনে। তুলার তোষক আর কেউ চায় না ফোমের তোষক কিনে। এখন রেডিমেট এর চাহিদা বেশী । লেপের পরিবর্তে কম্বল কিনে মানুষ। এতে করে আমাদের ব্যবসা লসের দিকে। অনেকে লসের কারণে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই পেশার কারিগর।
তারা আরো জানান, এক সময় শীতকালে লেপের বহুল ব্যবহার থাকলেও দিনে দিনে কমে এসেছে। কারণ আগের মতো এখন আর মানসম্মত তুলা পাওয়া যায় না। এছাড়া শীতের তীব্রতাও আগের তুলনায় কমে এসেছে, এখন শহরাঞ্চলে আর লেপ গায়ে দেওয়ার মতো তীব্র শীত পড়ে না। ফলে কম্বল গায়ে দিয়েই এখন অনায়াসে শীত পার করে দিতে পারে। দিন দিন লেপের ব্যবহার কমে আসায় এখন কাঁচামালের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই জিনিসটি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, একই ভাবে হাতে তৈরি লেপ তোষকের কারিগরের সংখ্যাও কমে এসেছে।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com