ফরিদপুরে স্কুলছাত্র সাব্বির বিশ্বাস (১৪) ও অটোবাইক চালক নাইম শেখকে (১৫) হত্যার সাথে জড়িত প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীর নাম সাগর মোল্লা (২৩)। তিনি ফরিদপুর সদরের লোকমানখার ডাঙ্গী মহল্লার বাসিন্দা। তাকে একজন সিরিয়াল কিলার বলছেন ফরিদপুর জেলা পুলিশ।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ফরিদপুর শহরের পূর্ব কমলাপুর মহল্লার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ ফায়ারিং পিন ও ট্রেগার সংযুক্ত একটি সিঙ্গেল শুট্যার পিস্তল, এক হাজার পাঁচশত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা লিখিত বক্তব্যে জানান, গত ১ এপ্রিল দুপুরে চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের খলিল মন্ডলের হাট হতে সাব্বির বিশ্বাস এর রিক্সা ভাড়া করে বিভিন্ন জায়াগায় ঘোরাফেরা করে কোকের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে তাকে পান করিয়ে গভীর রাতে অম্বিকাপুর ইউনিয়নের উত্তর দয়ারামপুর গ্রামে একটি ঘাষ ক্ষেতে নিয়ে যায়। পরে আছমত শেখ এর ব্যবহৃত পুরাতন কালো লুঙ্গির কাপড় ছিঁড়ে সাব্বিরের এর হাত পা বেধে গলায় কালো লুঙ্গির কাপড় পেচিয়ে সাগর মোল্লা, আছমত শেখ ও তার ছোট ভাই শিশু অপরাধী (১৬) মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে সেখানে লাশ ফেলে রেখে সাব্বিরের ব্যাটারি চালিত রিক্সা নিয়ে চলে যায়। এর ২০ দিন পর আবার এই একই চক্র গত ২০ এপ্রিল পরিকল্পনা করে নাইম শেখ (১৫) নামে এক কিশোরের অটো ভাড়া করে। এরপর নাইম শেখকে আসামী আছমত শেখের বাড়িতে নিয়ে হাত পা বেধে গলায় শাড়ির কাপড় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্ধি করে বাড়ির পূর্ব পাশে মুরগির ঘরের পাশে মাটিখুড়ে গর্ত করে রেখে অটোবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, গত ২ এপ্রিল সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করার পর তার বাবা ফরিদপুর সদরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আছর উদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী গ্রামের মো. আলমগীর বিশ্বাস (৪২) বাদী হয়ে গত ৩ এপ্রিল ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আলমগীর বিশ্বাস ঘোড়ার গাড়ী ও রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার চার ছেলের মধ্যে মেঝো ছেলে মো. সাব্বির বিশ্বাস (১৪) নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার চর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। অভাবের কারণে সাব্বির মাঝে মধ্যে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালাতো।
সাব্বির হত্যার তদন্ত করাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামী মো. আছমত শেখ (১৯) ও তার ১৬ বছর বয়সী কিশোর ভাইকে গত বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোররাতে ফরিদপুর সদরের গজারিয়া বাজার হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত দুই ভাই স্কুলছাত্র রিক্সাচালক মো. সাব্বির বিশ্বাস ও ইজিবাইক চালক নাইম শেখ হত্যার দায় স্বীকার করে ও তাদের প্রধান সহযোগী সিরিয়াল কিলার সাগরের নাম প্রকাশ করে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিকুর ইসলাম এর নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর একদিন পরই প্রধান আসামী সাগর মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, পড়াশোনার পাশাপাশি অভাবের সংসারে রিক্সা চালাতো স্কুল ছাত্র মো. সাব্বির বিশ্বাস (১৪)। গত ১ এপ্রিল সাব্বির রিক্সা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন ২ এপ্রিল তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এরপর, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালেরটিরা গ্রামের মো. সামসু হকের ছেলে নাইম শেখকে (১৫) হত্যা করে লাশ মাটিতে পুতে রেখে তার তার চালিত ইজিবাইকটি ছিনতাই করা হয়।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী সাগর মোল্লা একজন সিরিয়াল কিলার। এরা দ্রুত নগদ টাকা পাওয়ার আশায় সাধারণত অটোরিকশা বা অটোবাইক ছিনতাই করে বিক্রি করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এরা আট দশ হাজার টাকার অটোরিকশা ও অটোবাইক বা এগুলোর ব্যাটারির লোভে খুন করতেও পিছপা হয় না। এই চক্রে আরও কেউ আছে কী না তা খুঁজে বের করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সাগরের নামে চুরি, অস্ত্র, মাদক, হত্যাসহ মোট ৭ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরমধ্যে ৩ টি হত্যা মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, এই মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো. শামীম হাসান ও মো. ফরহাদ হোসেন।
সাগর মোল্লার কাছ থেকে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ২০১৮ সালের অস্ত্র ও মাদক আইনে একটি মামলা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে আজ শনিবার দুপুরে মামলা দুটি করেছেন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. শামীম হাসান জানান, সাগর মোল্লাকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। যদি সে দুটি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন তাহলে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হবে। স্বীকার না করলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com