ঢাকারবিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

তিন বিশ্ব রেকর্ডে পদ্মা সেতুর বিশ্বজয়

ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক
জুলাই ১৮, ২০২২ ১:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দেশি-বিদেশি হাজারো ষড়যন্ত্র, কারিগরি জটিলতা ও প্রাকৃতিক শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও খরস্রোতা নদীতে দোতলা পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। ২৫শে জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভোধনের মাধ্যমে পূরণ হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন, আবেগ-অনুভূতি, ভালোবাসা, গর্ব – অহংকার, আত্ন-মর্যাদা, সক্ষমতা ও হার-না-মানার প্রতীক। তবে এটি শুধু বিশ্বব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ নয়, কারিগরি দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে অনন্য সেতু।

পদ্মা সেতু শুধু নদীর দুই পাড়কেই যুক্ত করেনি, বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে অনেক দেশের সঙ্গে। সেতুতে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা – কর্মচারীর মেধার সমন্বয়, বিদেশি উপকরণ ও দেশীয় যন্ত্রপাতির মেলবন্ধনে নির্মিত হয়েছে গর্বের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর বিশদ নকশা প্রনয়ণে নেতৃত্ব দেন লম্বা নকশা প্রনয়ণে বিশেষজ্ঞ ও ব্রিটেনের রানির কমান্ডার অব দ্য অর্ডারে ভূষিত ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যাম। নকশা প্রণয়নে ব্যবস্থাপক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কেন হুইটলার। তাছাড়া নদীশাসনের নকশা করেন কানাডার ব্রুস ওয়ালেস এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের তদারকির নেতৃত্ব দেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট জন এভস।

যে তিনটি বিশ্ব রেকর্ডের জন্য পদ্মা সেতু অদ্বিতীয়

প্রথমটি – পাইলিং
খরস্রোতার দিক থেকে অ্যামাজনের পর প্রমত্তা পদ্মা নদীই বিশ্বে বৃহত্তম। প্রমত্তা পদ্মায় সেতু তৈরিতে
পিলারের (খুঁটি) সংখ্যা ৪২ আর স্পান ৪১। দুটি পিলার নদীর দুই তীরে। প্রতিটি পিলার নির্মাণে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার গভীর পাইলিং করা হয়েছে, যা বিশ্বরেকর্ড। পৃথিবীর কোনো সেতু নির্মাণে এত গভীর পাইলিং করতে হয়নি। পদ্মা সেতুর পাইলগুলো তিন মিটার ব্যাসার্ধের যা বিশ্বে বিরল । পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইল ৫০ মিলিমিটার পুরু স্টিলের পাইপে মোড়া। হাইড্রোলিক হ্যামারের মাধ্যমে পিটিয়ে পাইল পাইপগুলো নদীতে পোঁতা হয়েছে। বিশ্বে কোনো সেতু নির্মাণে এত গভীরে স্টিল পাইপ পুঁতা নজিরবিহীন ঘটনা।

দ্বিতীয়টি – ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং
ভূমিকম্পের আঘাতকে অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় হরাইজন্টাল লোড সামলানোর জন্য পিলারে পৃথিবীর বৃহত্তম ৯৬ সেট ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং বসানো হয়েছে যাদের প্রত্যেক সেটের সক্ষমতা ১০ হাজার টন। বুয়েটের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, যিনি আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো থেকে পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক এক্সপার্ট প্যানেলে যুক্ত থেকেছেন,তিনিও বলেছেন পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত পৃথিবীর বৃহত্তম ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং এর মত এত বড় বিয়ারিং এর আগে অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এই বিয়ারিং এর জন্য রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে পদ্মা সেতু।
ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল আরও বলেছেন,
পদ্মা সেতুতে দুই পিলারের মাঝখানের লোড বা ওজন ধারণ করার জন্য ট্রাস ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে । ট্রাস প্রযুক্তি কতগুলো ত্রিভুজের সমাবেশ ঘটানো হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব সহজেই পদ্মা সেতুর লোড বা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

শুধু তাই না – পদ্মা সেতুর পিলারগুলোর নিচে অনেক গভীর পাইলিং করা হয়েছে। তা করতে গিয়েও নতুন নতুন সমস্যা ইঞ্জিনিয়ারদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।
আপনারা শুনলে বিস্মিত হবেন, সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী রেলগাড়ি বা যানবাহনের ওজন, সেসবের গতির প্রতিক্রিয়া কিংবা সেতুর নিজের ওজনই শুধু হিসাব কষতে হয়নি,পানির লোড, বাতাসের ধাক্কা, ভূমিকম্পের কথা, দুর্ঘটনাবশত কোনো জাহাজের পিলারে ধাক্কার ক্ষতিও হিসাবে রাখতে হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারদের।

তৃতীয়টি – নদীশাসন
পদ্মা সেতুর কাজে আরেকটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড নদী শাসন। নদীশাসনে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র বিশ্বে আর হয়নি। পলিমাটির দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের নদীর পাড় দ্রুত ভাঙার সাথে সাথে এর গতিও বদলে যায়। এই জন্য নদীর ট্রেইনিং বা নদীশাসন অঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রমত্তা পদ্মার নদী ভাঙন রোধ এবং নদীর গতি প্রবাহ ঠিক রাখা, সেতুর নিচ দিয়ে নদীকে বইতে বাধ্য করা ছিলো অন্যতম চ্যালেঞ্জ । এই চ্যালেঞ্জ জয় করা না হলে দেখা যাবে, সেতু সেতুর জায়গায় থাকলেও নদীর গতিপথ চলে গেছে অন্য জায়গায়।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলগত জটিলতা নিরসনে বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল। আমৃত্যু সেই প্যানেলের প্রধান ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকৌশলী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর ভাষ্যমতে — পানি প্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজানের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা ও গতি পরিবর্তনশীল নদী পদ্মা। সেকেন্ডে ১৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয় এই নদীতে। সেতুর নকশা প্রণয়ণের সময় এই বিষয়টিকে মাথায় রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী । তিনি বলেছিলেন, একশ বছরে পদ্মায় কী পরিমাণ পানি প্রবাহিত হতে পারে, সেই হিসাবটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, মাত্র ২০ সেকেন্ড যে পরিমাণ পানি পদ্মা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়, তা দিয়ে পুরো ঢাকা শহরের সব মানুষের একদিনের পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এই রকম ইঞ্জিনিয়ারিং দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতু একদম আলাদা।

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com