ঢাকামঙ্গলবার , ৮ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

জনদুর্ভোগ, নাকি আমাদের অপরিচ্ছন্ন মানসিকতার উপহার?

মোহাম্মদ রাকিব
অক্টোবর ৯, ২০২২ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছিনা এমন চিত্র শহর কিংবা নগরাঞ্চলে কম-ই দেখা মেলে। বর্ষার নগন্য বর্ষণেও বিভিন্ন রাস্তা হয় হাঁটুজল, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঘটছে যেমন বিভিন্ন দুর্ঘটনা, তেমনি ড্রেনের দূষিত পানিতে একাকার হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। তবে এ চিত্র অবাক করার মতো বিষয় মনে হয়না আর আমাদের। যেন জলাবদ্ধতার সাথে আমাদের চরম শখ্যতা গড়ে নিয়েছি বহুকাল ধরেই, এ যেনো শত জন্মের ভোগান্তির সম্পর্ক। অথচ এই প্রতিবন্ধকতা আমাদের নিজেদেরই সৃষ্ট তা মানতে চাইনা কখনোই। তাড়াছা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলাটাও নিত্যনতুন নয়। নাক চিপিয়ে চলছি প্রতিনিয়ত। তাতে কিন্তু অবাক হইনা একটুও। হঠাৎ এক ভোরের ঘুম শেষে জেগে যদি দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি ডাস্টবিন বসেছে রাস্তার পাশ বেয়ে, ডাষ্টবিন এর যথাযথ ব্যবহার কিংবা রাস্তার দুপাশে নেই ময়লা আবর্জনার স্তুপ। সবুজ শ্যামল সোনার বাংলায় নাক চিপিয়ে চলতে হচ্ছেনা। তাহলে? তাহলেই ভীষণ অবাক হতাম তাইনা? হ্যা, অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ আমরা কাগজে কলমে সভ্য হলেও মানসিকতায় এখনও সভ্য হতে পারিনি।

আমরা তো চাইলেই যেখানে ইচ্ছা সেখানে ময়লা অবর্জনা ফেলতে পারি বা আমাদের ফেলা উচিত? তাইনা? তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে এতোটা পরিচ্ছন্ন হলো? বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন দেশ, ভাবতেই কেমন কষ্ট হচ্ছে তাইতো? আসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস ও কর্মের সাথে ই গড়ে ওঠে আমাদের পরিপার্শ্বিক পরিবেশ। এই পরিবেশের ধারক ও বাহক আমরাই। আমাদের ব্যবহারের প্রতিফলনই আমাদের প্রকৃতি। আর প্রকৃতির কষাঘাতে জর্জরিত হই আমরা প্রতিনিয়তই। দু-একটি স্থানের ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের দেশে গ্রাম কিংবা শহর, নদী কিংবা পাহাড়, রাস্তা কিংবা যানবাহন কিসের কথা বলবো, প্রায় প্রতিটি স্থানেই যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেন মানুষ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলছে। চলছে অপরিচ্ছন্নতার এক নোংরা প্রতিযোগিতা। কিন্তু রাত শেষে আমরা সুন্দর পরিচ্ছন্ন এক সকাল চাই। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ চাই। তাহলে আমরা কেন এভাবে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলছি? এটা কি শুধুই আমাদের সচেতনতার অভাব? না কি আলসেমি? কেন আমরা এভাবে বর্জ্য ফেলছি বা ফেলতে দিচ্ছি?
আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার করা খাদ্য দ্রব্যের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন, বিভিন্ন বেভারেজ এর প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বর্জ্য নিজেদের চাহিদা পূরণ হওয়া মাত্রই তা অবলীলায় ছুড়ে ফেলি যত্রতত্র। আমাদের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় উচ্ছিষ্ট ফেলবার জন্য পুরো দেশটাকেই আমরা ডাস্টবিন মনে করি। কিন্তু কখনোই ভাবছিনা, ছুড়ে ফেললেই তা নিঃশেষ হয়ে যায় না। এতে পরিবেশ যেমন সাংঘাতিকভাবে দূষিত হচ্ছে। তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ফেলে দিচ্ছি চরম ঝুঁকির মাঝে। নিজেদের সৃষ্ট দূর্ভোগে পড়ছি আমরাই।

জেনে রাখি, পলিথিন বা প্লাস্টিক এমন জিনিস, যা মাটিতে খুব সহজে মেশে না। কোনো ব্যাকটেরিয়ার ক্ষমতা নেই তাকে ‘ডিকম্পোজ’ করার। তাই মাটিতে প্লাস্টিক পুঁতে ফেলার অর্থ চিরকালের মতো সেই বিষ মাটিতে থেকে যাওয়া। এর ক্ষতিকর দিক জানার পরও ভালো বিকল্পের অভাবে দেশের জনসংখ্যার সাথে তাল মেলাতে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত এর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন হারের সাথে হচ্ছেনা এর সুষ্ঠু সংরক্ষণ কিংবা রিসাইকেলিং।
২০২০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদন সূত্র জানায়, “বাংলাদেশের নগর অঞ্চলগুলোতে বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০০৫ সালে ৩ কেজি ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে সে পরিমাণ ৩ গুণ বেড়ে ৯ কেজি হয়েছে।’ এছাড়াও বাংলাদেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ প্রতিবছরে প্রায় ২২ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন অথবা মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম। যা ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৭ হাজার ৬৪ টন। যা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর যদি আমরা বর্জ্যের সঠিক ব্যবহার না করতে পারি। এতোকিছু জেনেও আমরা বেখেয়ালিপনায় মত্ত, আমরা চাইলেই যে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি আমাদের সচেতনতাবোধের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে, ভেবেছি কখনো?

শুধু সরকার কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে আঙুল উচিয়ে না ধরে, পরিচ্ছন্ন শহর চেয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে না পড়ে। নিজের ব্যবহারের শেষ বর্জ্য কোথায় ফেলেছি তা মনে রাখতাম, সারাদিনে কয়টি চকলেট খেয়ে, চিপস কিংবা পানিয় খেয়ে সেসবের প্যাকেট কোথায় ফেলেছি, মনে রাখতাম বা সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতাম। তাহলেই বুঝতে সহজ হতো আমরা আমাদের সুন্দর জীবনের প্রতিবন্ধকতার কতোটা প্রতিবন্ধক ছিলাম। আপনার আমার অবলীলায় ছুড়ে ফেলা বর্জ্য সামান্য বৃষ্টিতেই নেমে যায় ড্রেনে। আপনার আমার দোকান কিম্বা শপিং মলের সামনে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে ওপরে পরিচ্ছন্ন করে ময়লা আবর্জনা টেনে ফেলে দিই ড্রেনে। এমন অসচেতনতার বেখেয়ালিপনায় একটা সময় ধীরে ধীরে ব্লক হয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে ড্রেনের স্বাভাবিক নিষ্কাশন প্রক্রিয়া। ড্রেনের ওপরটা ফকফকা রাখলেও, ভেতরটা যেন সদরঘাট। কিন্তু মনে করিনা এই ড্রেন দূষিত পানি নিষ্কাশনের জন্য, শহরে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার্থে তৈরি ড্রেনেজ, ডাস্টবিন নয়। এতে যেমন আমরা দূর্ভোগ পোহাচ্ছি, তেমনি বর্জ্যের পুনঃব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করছি। তাহলে, আমরা কি আদৌ পরিচ্ছন্ন জাতি?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে ঈর্ষান্মিত হই, কতো পরিচ্ছন্ন সুন্দর পরিপাটি দেশ। একটু মনোযোগ দিলে দেখবেন আমরা যখন সেসব দেশে যাই তখন এয়ারপোর্ট থেকে ই সভ্য হয়ে যাই। সেখানে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা তো দূরে থাকুক, সেদেশে সামান্য থুথু ফেলতেও ডাস্টবিন খুজে নিই। কিন্তু সে সভ্য আমরাই যখন নিজ দেশে ফিরে আসি, নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি। তাহলে সে সভ্য কি আমরা ভিন দেশের জন্য? নিজের মা, মাটি মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা উবে গেলো। তাহলে নিজ দেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা নেই কি?
বলতেই পারি এদেশে আইনের প্রয়োগ নেই, দোষ ছুড়ে দিই পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশনের দিকে। আসলে কি সব দোষ তাদের ই? আপনার আমার যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার প্রবণতার তুলনায় তাদের কার্যক্ষমতা অপ্রতুল নয়? পৌরসভা কিম্বা সিটি কর্পোরেশন তাদের নির্দিষ্ট স্থান থেকেই ময়লা নিয়ে যায়৷ কিন্তু আমাদের ছুড়ে ফেলার নৈরাজ্য স্থান কাল পাত্রের তোয়াক্কা করে না। শুধু সরকার কিম্বা রাষ্ট্র নয়, এগিয়ে আসতে হবে সবার। আইনের মাধ্যমে সবার মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভব নয়, যদি আমরা নিজেদের দেশপ্রেম থেকে সচেতন না হই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন “সোনার দেশ গড়তে আমার সোনার মানুষ চাই’। যত দিন না আমরা সোনার মানুষে পরিণত না হচ্ছি ততদিনে সোনার দেশ গড়া সম্ভব নয়। আমাদের আদর্শ মানুষ হতে হবে আমাদের সঠিক চর্চার মাধ্যমে। দেশপ্রেম ভালবাসার জায়গা থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।
আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলা, ডাস্টবিন ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে নিজ নিজ বিবেক বোধ থেকেই। হতে হবে সচেতন, নিজের দেশপ্রেম থেকে। “এ দেশ আমার, এ দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবার দায়িত্বও আমার। দোষারোপী মনোভাব নয়। নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। একবার চর্চা করে দেখুন আজ আমি সচেতন হই, আগামীকাল আমার দেখে অন্যকেউ হবে। তার সচেতনতায় আরো একজন।
শুধু আইনের প্রয়োগ ই নয়, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ জনসচেতনতা সৃষ্টি। পরিষ্কারের চেয়ে পরিচ্ছন্ন মানসিকতা সৃষ্টি জরুরি। ময়লা আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার মানসিকতা পরিহারের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া সম্ভব। শুধু আইনের প্রয়োগ কিংবা বাৎসরিক একটি পরিচ্ছন্ন দিবসে পরিচ্ছন্ন দেশ চেয়ে আন্দোলন নয়, নয় দোষারোপী মনোভাব।

পরিচ্ছন্ন ও জীবাণু মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে, সবুজ শ্যামল প্রিয় বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে, নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন জাতি হিসাবে তুলে ধরতে, লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত ভূখন্ডকে সজিব সুন্দর রাখতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের ই। আপনাকে সুন্দর সুস্থতার সাথে বাচতে, আগামী প্রজন্ম’র জন্য একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন বাসগৃহ রেখে যেতে নাগরিক সচেতনতা আজ খুব জরুরী।
দোষারোপ কিম্বা দৈনন্দিন পরিষ্কার নয়, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা সৃষ্টির জন্য পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গড়ার লড়াইয়ে আসতে হবে আমাদের সবার ই। আমরা যতদিন না মানসিক ভাবে পরিচ্ছন্ন হচ্ছি ততদিন আমরা একটি পরিচ্ছন্ন জাতিতে রুপান্তরিত হতে পারবো না।

আসুন শপথ করি, একটি ময়লাও যত্রতত্র নয় আর।

 

লেখকঃ জেলা সমন্বয়ক, বিডি ক্লিন, বগুড়া

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com