আমার মোটরসাইকেল তখন শান্তিনগর ফ্লাইওভারে। আমি আরোহী, সামনে রাইডার সাহেব চালিয়ে যাচ্ছেন। উপর-নিচ দুই দিকের রাস্তাই তখন গাওয়া ঘি-এর মতন ঘন জ্যামে ছেয়ে আছে।
সময় রাত নয়টা বা দশটা। এক আত্মীয়ার ফোন এলো- এই মুহুর্তে চিকিৎসা বাবদ কিছু টাকা লাগবে তার। দেরি হলে টাকা উঠানোর বন্ধ হয়ে যাবে- কিন্তু রাতেই ওষুধ কেনা প্রয়োজন তার।
আমি মোটরবাইকে বসে সাধারণত ফোনে কথা বলি না, তবুও পরিস্থিতি সঙিন তাই অনলাইনে নির্ভরযোগ্য আর আপন কে আছে দেখতে শুরু করলাম। শুরুতেই যাকে পেলাম তাকেই বললাম দ্রুত টাকা পাঠাতে। সে নির্দ্বিধায় পাঠিয়ে দিলো। আমার আত্মীয়া টাকা পেয়ে ওষুধ কিনে খুশি জড়ানো কান্না নিয়ে কল দিলেন। আমি তাকে জানালাম- আমাকে না, আরেকজন মারফত টাকা পাঠিয়েছি, দুয়া টা তার জন্য করবেন প্লিজ।
এমন রাতের কালোকে ঘুচিয়ে দেওয়া ব্যক্তিটার নাম ‘রাত্রি’। কিন্তু তার আলোকোজ্জ্বল পথচলা আর বিশ্বজয় করার বিপুল আয়োজন দেখে আমি প্রায়ই বলি- এই মেয়ের নাম রাত্রি না হয়ে ধরিত্রী হওয়া দরকার ছিলো।
উপস্থাপনা থেকে শুরু করে সংগঠক। ক্লাসের ফার্স্টগার্ল-এর মতনই তার প্রতিদিনের জীবন। একদিন এই মেয়ে যদি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার শীর্ষপদে আসীন হয় তাহলে পৃথিবীর বাদবাকি সবাই অবাক হলেও আমি হবো না। কারণ বিগত কয়েক বছর যাবত দেখা এই আলোকোজ্জ্বল ‘রাত্রি’ আমার কাছে স্নেহময় এক তারকা, কিংবা গর্জন করে বেজে ওঠা এক মেঘমালা, অথবা দুম করে জ্বলে ওঠা এক টুকরো বারুদ।
তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জনপ্রিয় প্লাটফরম এক্সিলেন্স বাংলাদেশ-এর কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আফসানা রাত্রি মিশু একদিন পৃথিবীর ‘রাত্রি’কে ঘুচিয়ে নিজ গুণের আলোতে ‘দিন’ এনে দিবে এই পৃথিবীতে, এটা আমার প্রত্যাশা না- এটা আমার দৃঢ়তম বিশ্বাস।
আজ রাত্রির জন্মদিন। একশ বছর পরেও এমন করেই কোনো মধ্যবয়সী লেখক ‘রাত্রি’র আলো নিয়ে আলোচনায় মুখর থাকবে তার জন্মদিনে- এই স্বপ্নে ডুবে আছি আমি। রাত্রিরা প্রতিদিন বাঁচুক- আমার সেই বিপদগ্রস্ত আত্মীয়ার মতন মানুষদের মোনাজাতে মোনাজাতে। আমার মতন ছাইপাশ বড়ভাইদের নিমজ্জমান প্রার্থনায়।
– আল নাহিয়ান, লেখক
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com