ঢাকারবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

আলোর প্রদীপ গড়ছে আলোকিত সমাজ

সাকি সোহাগ
অক্টোবর ১১, ২০২২ ৯:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মানুষ হয়ে জন্মালে অন্ততপক্ষে কিছু করে যাওয়া উচিৎ। এরকম একটা লাইন পড়েছিলাম কাকাবাবু সমগ্রতে। এত এত মাখলুকাতের মধ্যে স্রষ্টা মানুষকে প্রধান করেছে। সেই আঙ্গিকেই হয়তো সুনীল বাবু বলেছিলেন কথাটা। আলোর প্রদীপ যুব সংগঠন, একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। বগুড়া জেলার সোনাতলা থানায় অবস্থিত আলোর প্রদীপ এর অস্থায়ী কার্যালয়। অর্থই সব কিছু নয়, মনবল ও কঠোর পরিশ্রম বলেও একটা কথা আছে আলোর প্রদীপ এর জন্মলগ্নের ইতিহাস তো তাই বলে।

বৃষ্টিমুখর একটি দিনে সংগঠনের অন্যতম একজন সৈনিক এম এম মেহেরুল একদিন এক ভাতিজার স্কুলে যাওয়ার অনিহা জানতে পারে। জানতে পারে তার পিছনের কারণ। বাবার আর্থিক অবস্থা অশোচনীয়। হত দরিদ্র পরিবারের সেই ভাজিতাকে গাইট(উত্তর পত্র) কিনে দিতে ব্যর্থ বাবা। বিষয়টা তৎক্ষণাৎ সচেতন এক দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া যুবক এম এম মেহেরুলের মস্তিষ্কে আঘাত করে। সেই আঘাত দিনের ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে। মস্তিষ্কে জেঁকে বসে সমাজের এই অসহায় অতিদরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা! আজকের এই সমাজের চোখে নাড়া দেওয়া সংগঠনটির জন্মসূত্র এখান থেকেই।

কয়েকজন ছেলে-পেলে এক সাথে হয়ে ভাবে বিষয়টা। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা সবাই মিলে সহযোগিতার হাত বাড়াবে। সবাই প্রতি সপ্তাহে দুই টাকা করে জমাবে সমাজের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য। দুই টাকা? অনেকেই হেসে ছিল; কী হবে এই দুই টাকা দিয়ে? কিভাবে সম্ভব? সম্ভব। সকলের মন্তব্যকে পিছনে ফেলে সেদিন এম এম মেহেরুলের ডাইরির শেষ পাতায় সাংগঠনিক ভাবে অর্থ প্রদানে প্রথম যার নাম লেখা হলো তিনি শ্রদ্ধেয় মোঃ মহসীন আলী। অবাক হতে হয় যে, ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সংগঠনটি ১১৩ জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থীর সকল শিক্ষা ব্যয় সফলতার সাথে বহন করে আসছে এবং ৯ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাখাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ভেঙে পড়াটা সহজ। কিন্তু ভাঙা সমাজের বুকে মাথা উচু করে বুক টান করে উঠে দাঁড়ানো খুব কঠিন। সেই কঠিন কাজকে সহজ করেছে বেশ কিছু তরুণ। সংগঠনের নাম লোগো শ্লোগানের চিন্তা মাথায় চেপে বসলো সবার; যখন ৪০ টাকা জমা হয়েছে। ইতোমধ্যে সবাই নিয়মিত ধার্যকৃত অর্থ তথা দুই টাকা দিতে শুরু করেছে। ঠিক আরেকটি বৃষ্টির দিনে ডাক্তারি দাদার বারান্দায় বসে সংগঠনের নাম ও শ্লোগান নিয়ে ভাবতে গিয়ে খাতায় কমলের কালি ঢাললেন এম এম মেহেরুল ও সংগঠনের অন্যতম সদস্য মোঃ মেহেদী হাসান রিপন।

এক সময় হুট করেই নাম ও শ্লোগান নির্ধারণ করা হলো সংগঠনের। আলোর প্রদীপ যুব সংগঠনের নামটা সবার পছন্দ হলেও কিছুটা খটকা থেকে গেল যে, আলোর আর প্রদীপ এর মূল অর্থ প্রায় একই। যদিও কিছুদিন পরেই সে খটকার ঘোর কেটে গেছে সংগঠনের কার্যকলাপে। তবে মনে প্রাণে মস্তিষ্কে জায়গা করে নিলো সংগঠনের শ্লোগানটি ‘সুন্দর জীবনের প্রত্যয়ে’।

যখন নাম ও শ্লোগান ঠিক হলো। সদস্যও বাড়তে থাকলো। তখন তারা চিন্তা করলো সবাই একত্রিত হয়ে সাংগঠনিকভাবে কার্য সম্পাদনের জন্য দায়িত্ব ভাগাভাগি বা পরিচালনা পর্ষদ তৈরি উপলক্ষে একটা মিটিং করা যেতে পারে। ১১ই অক্টোবরে ২০০৮ সালে বর্তমান সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা গুণী ব্যক্তিত্ব আব্দুল রাজ্জাকের পরামর্শে সোনাতলা ইউনিয়ন পরিষদের কাজী অফিসে সেদিন সবার উপস্থিতিতে মিটিংটি সম্পূর্ণ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় হত দরিদ্র পরিবারের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা তথা সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হবে। সেদিন থেকেই সংগঠনটির অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হয়। আজ পর্যন্ত চলছে সফলভাবে। আলোর প্রদীপের সহয়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। আনন্দের ব্যাপার তারা পড়াশুনার পাশাপাশি পরিবারে আর্থিক সমস্যা দূর করতে কেউ কেউ সরকারি বেসরকারি কর্মেও যোগদান করেছে।

আরও আনন্দের খবর আগামী ১১ই অক্টোবর ২০২২ সালে সংগঠনটি পনেরতম বছরে পদার্পন করতে যাচ্ছে বর্তমান ১৫৫জন সদস্যকে সাথে নিয়ে। বর্তমান সময়ে উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের থেকে অনেক দূর এগিয়ে আলোর প্রদীপ। সমাজের অসঙ্গতি, কুসংস্কারের বিপক্ষে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে সংগঠনটি। উপজেলা, নিজ জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে আলোর প্রদীপ তাদের মানসম্মত কর্মকান্ডের জন্য। সমাজের সচেতনামূলক কাজকর্মের জন্য। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, আলোর প্রদীপ বৃত্তি প্রকল্প, জামিলা আখতার বীনু দরিদ্র শিক্ষার্থী পুষ্টি প্রকল্প, বাল্য বিবাহ, যৌতুক বিরোধী সচেতনা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণকে সহয়তা ও সুস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা।

আলোর প্রদীপ এখন পর্যন্ত মাদকবিরধী ক্যাম্পেইনের মধ্যদিয়ে সমাজের সাধারণ জনগণের প্রায় ৬৭,৭৩৮ জন মানুষকে মাদকের ক্ষতি, মাদকে সমাজের ও নিজের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনা প্রোগ্রাম সফলতার সাথে করে আসছে। সেই সাথে সমাজে বাল্য বিবাহ ও যৌতুক প্রথা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। ৫টি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও বাল্যবিবাহে সমাজের ক্ষতি, কনের ক্ষতি এবং বাল্যবিবাহ সম্পর্কেও সমাজের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫০টি উঠোন বৈঠক করে ২,৪৬৬ জন অভিভাবকদের সচেতন করে এসেছে।।

‘আলোর প্রদীপ বরাবরই দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধে এক অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে চলছে।‘ সংগঠনটির যুগপূর্তির এক বাণীতে বলেছিলেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধেয় মোঃ আব্দুল রাজ্জাক। সংগঠনটির আজকের এই পর্যায়ে আসার মূল কারণ হচ্ছে তাদের গঠনতন্ত্র। সংগঠনটি নিয়মকানুনে বেশ শক্ত। কাজের পরিকল্পনা, ধরন, সামাজিক প্রেক্ষাপট সব দিকে নজর রেখে সমাজের পাশে, সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে কাজ করে যাচ্ছে আলোর প্রদীপ যুব সংগঠন। সম্প্রতি সংগঠনটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়া হতে নিবন্ধন পেয়েছে। যুগ পেরিয়ে আরও দু’বছর পেরুলো সংগঠনটি। এ যেন এক মহানন্দের সংবাদ। আনন্দ উল্লাসে কেটে যাগ ১৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সমাজের পাশে এভাবেই যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাক আলোর প্রদীপ যুব সংগঠন এটাই কামনা, এটাই আশা।

লেখকঃ গল্পকার ও নির্বাহী সম্পাদক, উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com