কালের গহ্বরে মিলিয়ে যাচ্ছে আরেকটা খ্রিষ্টীয় সন। নতুন সূর্যোদয়ে বর্ষপঞ্জিতে যোগ হচ্ছে নতুন পাতা, ২০২৩ সাল। পুরনো স্মৃতি আর নতুন বছর নিয়ে সবারই প্রত্যাশার গল্প রয়েছে। কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন তানজিদ শুভ্র…
ঘন কুয়াশার ধাঁধা ভেদ করে ৩১ ডিসেম্বরের চাঁদমামার বিদায়ের সাথে ১ জানুয়ারির তরুণ সূয্যিমামার আগমনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ক্লান্ত ২০২২ আর আসছে নবাগত ২০২৩!
প্রতি বছরের মতো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার মাঝেই ২০২২ সালও স্বমহিমায় জীবনের স্মৃতিময় ডায়রীতে স্থান করে নিলো। করোনা মহামারীতে ধুকতে থাকা পৃথিবীর ফুসফুস ধীরে ধীরে সেড়ে উঠতে শুরু করে ২০২২ এ।লকডাউনে লম্বা সময় ঘরবন্দী থাকা মানুষগুলো আবার পৃথিবীর যত্ন করে বেছানো সবুজ গালিচায় নিজেদের বিচরণকে জানান দেয়; পাল্টে যায় মানুষের জীবনধারা।
২০২২ আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে। দেখিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের করোনায় বিপর্যস্ত জীবনকে আবার আগের মতো সাজানোর চেষ্টাকে। দেখিয়েছে এতোকিছুর মাঝেও মানুষ যে আশায় বুক বাধতে পারে হার না মানা প্রত্যয়ে-এই ধ্রুব সত্যটিকে।
এ বছর আমাদের দেশের কিছু মহাকীর্তিও মনে রাখার মতো। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল যেন অনন্তকাল জগতের বুক ফুরে জানান দিবে- আমরা তো ২০২২ এই এসেছিলাম বাঙ্গালীর স্বপ্নাতুর চোখে প্রদীপের শিখার মতো জ্বলজ্বল করতে করতে। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ২০২২ হয়ে থাকবে লিওর হাতের সেই অতি আকাঙ্খিত বিশ্বকাপের প্রতিটি প্রতিফলিত আলোর মতোই। সব মিলিয়ে মন্দ যায়নি ২০২২ সালটা!
২০২৩ আসুক আরও নবীন বেশে, পৃথিবী আরও সুস্থ হোক।মানুষ খুঁজে পাক তার স্বপ্নের পথ, পূর্বের সকল অপ্রাপ্তি ভুলে জীবনের নতুন ডায়েরীকে রাঙিয়ে তুলুক রং বেরঙের অর্জনে- যেন এটাই শুরু। যেমনটা জর্জ ইলিয়ট বলেছিলেন-“It is never too late te be what you might have been” এগিয়ে যাক দেশ, এগিয়ে যাক সৌরজগতের পৃথিবী নামক এ ছোট গ্রহটি।
আল হাসিন সৌমিক,
শিক্ষার্থী, পাবনা মেডিকেল কলেজ।
২০২২ সালটা অনেক পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে কেটেছে। ২০২২ সালটা শুরু করি বিশ্ব মহামারীকে সঙ্গে নিয়ে। করোনার সময় অনেক বড় ভাইদের কাছে পেয়েছি, যা আমার এই বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও শিক্ষা জীবনের সেরা প্রাপ্তি সরকারি স্কলারশিপকে নিজের করে নিতে পেরেছি।
২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অর্জনের প্রত্যাশা করি। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধি সহ জীবন আরো সুন্দর ও কর্মময় হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা করি।
কাউছার আহমেদ,
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২২ এ জীবনের কিছুটা বিষাদময় সময় পার করেছি। সময়টা ছিল প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছি আর কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। খারাপ সময়টাতে অনেকেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ আর কিছু কাছের মানুষ দূরে সরে গিয়েছে। হয়ত ঈশ্বর যা কিছু করে মঙ্গলের জন্যই করে। ২০২৩ সাল সবার ভালো কাটুক এই কামনাই করি।
অনুপ্রমা,
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
জানিনা ঠিক কখন মনের অজান্তে একটি স্বপ্ন বুনেছিলাম। স্বপ্নটা ভাঙার ঠিক পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আঁচ করতে পারিনি স্বপ্নটা আমাকে এতো তীব্র ভাবে আচ্ছাদন করে রেখেছিলো। এই বুননটা ঠিক কতটা গভীর ছিলো তা এখন টের পাচ্ছি। ২০২২ ছিলো এক অর্থে আমার প্রায় সবকিছু হারানোর বছর। অন্তত এখন পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে। অনেক কাছের মানুষ, বন্ধু আস্তে আস্তে দূরে সরে গেছে। অনেক দোষারোপ, অবহেলায় আমার আকাশ ক্রমেই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বস্তুত আমি একেবারে একা হয়ে পড়েছি। গুটিকয় মানুষ ছাড়া আমার খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। কিছু কিছু সময় এই পৃথিবী বড্ড নির্দয় ও অসহনীয় মনে হয়। এখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে। অথচ বছরের শুরুটা হয়েছিলো নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন শপথ নিয়ে। ২০২৩ সাল, আরো একটি নতুন বছর দোরগোড়ায়। কিন্তু নতুন করে স্বপ্ন বুনার মতো অবস্থায় নেই আমি। তবু মধ্যরাতের দিকহারা নাবিকের মতো উত্তাল সাগরে প্রভাতের প্রতীক্ষায় আছি। প্রভাতের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ড আমার কাছে একটি করে আলোকবর্ষের সমান।
– কক্ষচ্যুত নক্ষত্র,
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত চলমান প্রক্রিয়ায় চলতে থাকে। তবুও যেন ডিসেম্বরের শেষ সূর্যোদয় আমাদের আগের বারো মাসের হিসেব মনে করিয়ে দেয়। ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে যায়। নতুন বছরের জন্য সবাই শুভেচ্ছা জানায়। হারিয়ে যাওয়া বছরে রয়ে যায় আমাদের হাজারো স্মৃতি; সুখের কিংবা দুখের। উচ্চ শিক্ষার জন্য যেসব ক্যাম্পাস নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলাম তা অধরাই রয়ে গেল। আমি নিজেকে মানিয়ে নিলাম ভিন্ন পরিচয়ে। কাজ করে যাচ্ছি নিজের দক্ষতা, আগ্রহ থেকেই ভিন্ন দিকে। এভাবেই পথচলায় ভবিষ্যতে কী আছে জানি না। প্রত্যাশা করি ভালো কিছু হোক। আমিও সমতায় ফিরতে চাই। বাবা-মায়ের লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে না পারা আমার অপূর্ণতা রয়ে যাবে। ২০২৩ কিংবা পরবর্তী সময় প্রভু আমার সফলতার দ্বার খুলে দিক, বাবা মা সহ ভালোবাসার মানুষদের প্রত্যাশিত সফলতা অর্জনের পাশাপাশি নিজের জীবনের জন্য কিছু অর্জন হোক যা এ জীবনের পরেও ইহলোক ছাড়িয়ে পরকালে আমার পাথেয় হবে। পৃথিবীবাসী সুস্থতায় বাঁচুক- হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২৩।
ধ্রুব আবির,
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com