স্নাতক পড়ুয়া তানজিলা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক কাজে লাগিয়ে শুরু করেন নিজের নতুন উদ্যোগ ‘উপন্তিক’। শুরুটা হয়েছিল ব্লকবাটিকের কাজ দিয়ে পোশাকে নানান গল্প ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। তবে বর্তমানে পাটের তৈরি ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ প্রস্তুতে কাজ করছে উপন্তিক।
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা উম্মে তানজিলা স্বপ্ন দেখতেন ডাক্তার হওয়ার। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী না হয়ে অনেকটাই ভেঙে পড়েন, এরপর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও সুযোগ হয়নি ভর্তির। লালিত স্বপ্ন পূরণ না করতে পেরেও পুরোদমে থমকে যাননি তানজিলা। শখের বশে রঙ করার সময় বড় বোনের উৎসাহে চিন্তা করেন পোশাক নিয়ে কাজ করার। চাকরি পছন্দ না করা তানজিলা হাঁটতে থাকেন উদ্যোক্তা হওয়ার এ পথে। এভাবেই স্বপ্নের মোড় ঘুরতে থাকে ভিন্ন দিকে। উপন্তিক নাম বাছাই সম্পর্কে তানজিলা জানান, বরাবরই মৌলিক নাম খুঁজছিলেন তিনি। চমৎকার এ নামটি পছন্দ হওয়ায় এ নামেই কাজ শুরু করেন।
শুরু থেকেই পরিবারের সদস্যদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন তানজিলা। মায়ের বলা ‘তুই পারবি, সুন্দর হচ্ছে’ কথাগুলো সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে তাকে। স্বল্প পুঁজিতে শুরু করলেও এখন তানজিলার অধীনে আরও তিনজন কাজ করছেন। গ্রাহকের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো মানের পণ্য সরবরাহে প্রতিশ্রুত উপন্তিক।
তানজিলা বলেন, ‘গ্রাহক নতুনত্বকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আমিও তাদের চাহিদামতো কাজে নতুনত্ব এনেছি। নতুন কোনো কিছু পেলে গ্রাহকের চাহিদাও থাকে বেশি।’
তিনি আরও জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন হ্যান্ডব্যাগের চাহিদা বেশি তেমন প্রাতিষ্ঠানকি ক্ষেত্রে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ব্যাগ সরবরাহ করে উপন্তিক।
পোশাকে ব্লকবাটিকের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপন্তিকের স্বত্বাধিকারী উম্মে তানজিলা বলেন, ‘আপাতত পুরো টিম ব্যাগ নিয়েই কাজ করছি। ড্রেসের কাজ এখন করা হয় না। তবে পরে বড় পরিসরে ড্রেস নিয়ে কাজ শুরু করব।’
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের বিষয়টি স্মরণ করে ব্যবসার ঝুঁকি নিয়ে তানজিলা বলেন, ‘অনলাইন বা অফলাইন ঝুঁকি সব ক্ষেত্রেই আছে, সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। আমার কাজ যেহেতু পুরোটা অনলাইননির্ভর তাই অনলাইন না থাকলে ব্যবসা বন্ধ। প্রতিদিন আমার যে পরিমাণ অর্ডার আসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সে অর্ডারগুলো তখন আসেনি। অফিসের খরচ পুরোটাই এবার নিজের থেকে দিতে হয়েছে।’
উপন্তিককে দেশসেরা ব্র্যান্ড করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন উম্মে তানজিলা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘আমি চাই আমার নাম না, উপন্তিক নাম সবাই জানুক। আমার ছোট্ট ফেসবুক পেজ একদিন অনেক বড় ব্র্যান্ড হবে, এমনটাই চাওয়া।’
উম্মে তানজিলা পড়াশোনা করছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ীতে রয়েছে উপন্তিকের কারখানা; যেখান থেকেই স্বপ্ন ছুঁয়ে আগামীর পথে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যমী তানজিলা।
সূত্র- প্রতিদিনের বাংলাদেশ