
ঈদের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রাণন্ত থেকে আসা পর্যটকের ব্যাপক আগমন ঘটেছে পাহাড়ের রাণী খাগড়াছড়িতে। ঈদের দিন ভ্রমনপিপাসুদের তালিকায় স্থানীয়দের সংখ্যা বেশি থাকলেও আজ ৪মে (বুধবার) সকাল থেকেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পয়েন্টে দেশের বিভিন্ন এলাকা আগত পর্যটকের ঢল নামে।
বিশেষ করে তারেং ঝর্ণা, আলুটিলা রহস্য ঘোহা, জেলা পরিষদ পার্ক, হাতির মাথা, দেবতা পুকুর, জলপাহাড়,সাজেকসহ পয়েন্টে পর্যটকদের ভীড় বেশি। শুধু সাজেকনয় জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের পদচারনা রয়েছে।
পাহাড়ের রানী খাগড়াছড়ি সবুজের ঘেরা ও সৌন্দর্য্যের রুপে ভরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, জেলা পরিষদ পার্ক, তারেং আলুটিলা বৌদ্ধ বিহার, মায়াবিনী লেখ পর্যটকদের বরর্ণ করতে নানান ভাবে সাজানো হয়েছে। এবার ঈদের ছুটির টানা বন্ধে পাহাড়ে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ব্যাপক আগমন ঘটেছে।
গত দুইবছর ঈদে করোনার কারণে পর্যটকশূন্য থাকায় বড় অংকের লোকসান গুনেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার ঈদের ছুটিতে পাহাড়ে পর্যটক সমাগম বাড়ায় করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস অন্তত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়িতে গত দুই বছর করোনার কারণে তেমন পর্যটক আগমন হয়নি। তবে এবার ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এরই মধ্যে জেলার ৩০টি আবাসিক হোটেলে ঈদের বুকিং বুকিং গেছে।
খাগড়াছড়ির রহস্যময় আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র সুড়ঙ্গ, তৈরাংতৈকালাই (রিছাং ঝরনা), পার্বত্য জেলা পরিষদের হটিকালচার পার্ক, মায়াবিনী লেখ, তারেংসহ সকল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় জমেছে বলে জানান হোটেল ও মোটেল ব্যবসায়ীরা।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্তাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, পর্যচকদের কাছে আলুটিলা প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলুটিলায় ঝুলন্ত ব্রীজ, লাভ পয়েন্ট, নন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক আলুটিলা ভ্রমণ করবেন বলে আশা করছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণমিত্র বড়–য়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের হোটেল সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে অতিথি বরণে আমরা সবধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। হোটেলের কক্ষগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা আমাদের বললে আমরা বেড়াতে পিকাআপ ও চাঁদের গাড়ি ঠিক করে দিব।
খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া এলাকার মারমাদের জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট সিস্টেম। সিস্টেম রেস্টুরেন্ট আচিং মারমা জানান, ঈদের বন্ধে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি পর্যটক আমাদের হোটেল খাবার খেতে আসেন। পাহাড়ের ঐতিহ্য পাহাড়ি খাবার আমরা পরিবেশনা করি। এই দিকে ঈদের সময় বাড়তি চাপ সামাল দিতে আমরা রেস্টুরেন্ট সংস্কার করছি।
খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কে পর্যটকবাহী পিকাপ চালক বসন্ত ত্রিপুরা ও দীপন ত্রিপুরা জানান, রমজান মাসে কোনো পর্যটক ছিল না। বন্ধ থাকার করণে আমরা কষ্টে সংসার করতে হয়েছে। তবে ঈদের ছুটিতে টানা বন্ধে পর্যটক সমাগম বাড়ায়। পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পেলে আমাদের গাড়ির বুকিংও বাড়ছে।
খাগড়াছড়ির পার্বত্য পিকআপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশলয় তালুকদার বলেন, এসময় পর্যটকবাহী পিকআপ ও জীপের চাহিদা থাকে বেশি। ঈদেও দিন থেকে টানা তিন দিন আমরা গাড়ি দিতে পারি না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে গাড়ি এনে পর্যটদের বেড়ানোর সুযোগ করি। করোনার প্রকোপ কমার পর থেকে পর্যটন ব্যবসা চাঙা হয়েছে। এবার ঈদ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। ঈদের বন্ধে প্রতিদিন খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ২শর বেশি গাড়ি যাতায়াত করছে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দুবছর করোনাকালে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতে অন্তত ২শ কোটির টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ভালো আছে। সারাদেশ থেকে পর্যটকেরা ২, ৩ ও ৪ মে পর্যন্ত আমাদের মোটেল পুরো বুকিং আছে। এবার ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। ঈদে হোটেল ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ন পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
এদিকে, সম্প্রতি খাগড়াছড়ির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ বলেন পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শতভাগ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে রাতদিন টহলে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
জেলা প্রশাসক প্রতাব চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণসহ সার্বিক বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। কোনোভাবে যাতে সমস্যা না হয়; সে জন্য বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শতভাগ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে অতিরিক্ত রাতদিন টহলে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com
