পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে গত শনিবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঘনিমহেশপুর এলাকার রুহিয়া থানা বিএনপির কার্যালয়টি ভাঙচুরের পর আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় সেখানে কৃষি বিভাগের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সাইনবোর্ডটি তুলে নিয়ে গেছে কয়েকজন তরুণ-যুবক।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আহ্বান করে রুহিয়া থানা বিএনপি। অন্যদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে একই দিন বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় রুহিয়া থানা মহিলা আওয়ামী লীগ। দুই পক্ষের কর্মসূচিকে ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিমহেশপুর এলাকার থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেদিন থেকে বিএনপির কার্যালয়টি সেভাবেই পড়ে ছিল।
গত বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজন থানা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বাঁশের খুঁটিতে টাঙানো একটি সাইনবোর্ড দেখতে পান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো জুড়ে দিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও।’ সাইনবোর্ডটি সারা রাত সেখানে থাকলেও আজ সেটি গায়েব হয়ে যায়।
বিএনপি কার্যালয়ের পাশে একটি দোকানে মাংস বিক্রি করেন মো. সাব্বির। তিনি বলেন, গতকাল রাতেও সাইনবোর্ডটি দেখেছেন তিনি। আজ সকালে দোকান খুলতে গিয়ে দেখেন সেটি নেই। রাতের আঁধারে যেভাবে সাইনবোর্ডটি এসেছিল, ঠিক সেভাবেই গায়েব হয়ে গেছে।
আবদুল জব্বার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে দুজনকে সাইনবোর্ডটি তুলে নিয়ে যেতে দেখেন তিনি। তবে অন্ধকারে তাদের চেনা যায়নি।
এর আগে জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর জানিয়েছিলেন, ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানা বিএনপির কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি। ১৯৯৬ সালে তাঁর বাবা আবদুল জব্বার চৌধুরী ৫৩ শতক জমি বিএনপিকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন। সেই থেকে বিএনপি ওই জায়গা ব্যবহার করে আসছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. তৈমুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল সাইনবোর্ড দেখে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছিল, সাইনবোর্ডটি কৃষি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে লাগানো হয়নি। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর বিএনপি কার্যালয়ের জায়গাটি দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের লোকজন সেখানে কৃষি কার্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল। আজ তারাই আবার সেটা তুলে নিয়ে গেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ে কৃষি বিভাগের সাইনবোর্ড ঝোলাননি। সুতরাং তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় গতকাল বলেছিলেন, ‘রুহিয়ায় কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার একটি কোয়ার্টার আছে। যেটি এখন পরিত্যক্ত। সেই জায়গা আমাদের দখলে আছে। তবে বিএনপির কার্যালয়সহ ওই জায়গার কাগজপত্র আমাদের অফিসে সংরক্ষিত নেই। সেখানে কে বা কারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে, তা বলতে পারছি না। সেই সাইনবোর্ড কৃষি বিভাগ থেকে যে ঝোলানো হয়নি, তা নিশ্চিত করছি।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণ রায় বলেন, ‘কৃষি কার্যালয়ের সাইনবোর্ডটি ঝোলানোর কথা শুনে দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কিছু তথ্য দিতে পারেননি। এখন শুনলাম, রুহিয়া বিএনপি কার্যালয়ে ঝোলানো সেই সাইনবোর্ডটি আর নেই।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com