সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরেও হঠাৎ বেড়েছে চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব। প্রায় এক সপ্তাহে চোখ ওঠার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচুর নারী-পুরুষ ও শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিনিয়তই চোখ ওঠা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে, ফলে প্রয়োজনীয় ঔষধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলার প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই কমবেশি চোখ ওঠা রোগ হানা দিয়েছে। নাগরপুর সদর হাসপাতাল, হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র, বেসরকারি ক্লিনিক ও ঔষধের দোকানদারদের কাছে চোখ ওঠা রোগীরা পালাক্রমে ভিড় জমাচ্ছেন। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে প্রায় সব সদস্যই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণত চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে ব্যথা অনুভব করা, রোদ্রে চরম অস্বস্তিলাগা লক্ষণ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। সব বয়সের মানুষ এ ছোঁয়াচে ভাইরাল ইনফেকশন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ রোগে আক্রান্ত নাগরপুর সদরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী মুন্নী জানান, প্রথমে আমার ছেলে ও পরে আমি আক্রান্ত হই। একদিন পরে আমার পরিবারের আরো একজন আক্রান্ত হয়। দু’চোখ হঠাৎ করে লাল হয়ে যায় এবং চোখ ফুটতে (খচখচ) ও ব্যাথা শুরু হয়। নাগরপুর বাজারে হোমিও চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন ৯০% সুস্থ্য।
৭০ বছরের বৃদ্ধ মো.লোকমান বলেন-আমার চোখ ওঠার পর দু’বেলা জার-ফুক নিয়েছি এবং পাশাপাশি চোখে ড্রপ দিয়েছি আমি এখন সুস্থ।
এদিকে চোখ ওঠা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসিতে চোখের ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা মতো ড্রপ না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চোখ ওঠা রোগীরা।
মুকতাদির হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্রের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা.এম.এ.মান্নান বলেন, গত চার’দিনে চোখে ভাইরাস আক্রান্ত ৪০ এর অধিক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ভাবে থাকতে হবে। তার ব্যবহৃত তোয়ালে, গামছা, রুমালসহ অন্য সবকিছু আলাদা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন চোখ ওঠা এই রোগ থেকে বাঁচতে নিজেদের সচেতন হতে হবে। চোখে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে। চোখে নিয়মিত ড্রপ দিতে হবে ও মুখে লক্ষ্মণ অনুযায়ী মেডিসিন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা.কাজল পোদ্দার জানান, গড়ে প্রতিদিন ২০/৩০ জন চোখ ওঠা রোগী আসে। হাসপাতালের কমিউনিটি ভিষন সেন্টারের মাধ্যমে চোখের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চোখ ওঠা রোগী চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য সম্ভব।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা. রোকনুজ্জামান খান বলেন, নিয়মিত অধিক হারে চোখ ওঠা রোগী হাসপাতালে আসছে তাদেরকে চিকিৎসা সহ মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অধিক রোগী আসায় ঔষধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন এখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই, মেডিকেল অফিসারগণ ও প্রশিক্ষিণপ্রাপ্ত নার্সগণ চোখের চিকিৎসা দিচ্ছেন। চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস একটি ভাইরালজনিত রোগ, একজনের থেকে আর একজনের ছড়ায়। ২/১ দিন বাসায় থেকে ব্যাথা নাশক ও এন্টিহিস্টামিন ঔষধ খাবে এবং কাল চশমা ব্যবহার করবে, পর্যাক্ত পানি খাবে, রোদের আলোতে কম যাবে তাহলেই এই চোখ ওঠা থেকে আরোগ্য সম্ভব।
উল্লেখ্য, চোখ উঠা (Conjunctivitis, কন্জাঙ্কটিভাইটিস) হচ্ছে চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। সাধারণভাবে প্রচলিত কথা ‘চোখ ওঠা’ বলতে চোখ লাল হওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু চোখ লাল হওয়া একটি উপসর্গ মাত্র।এই ধরণের ইনফেকশন প্রথমত এক চোখে হয় পরবর্তী দুচোখেই দেখা দেয়।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com