রাজধানীর নিকটবর্তী সাভার পৌরসভাটি যেন একটি ডাষ্টবিনে পরিনত হয়েছে। সাভার পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লার দুইশতাধিক স্থান থেকে প্রতিদিন ভ্যানে করে ময়লা আবর্জনা এনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা বাসষ্ট্যান্ডে পৌর ভবনের সামনে ফাঁকা মাঠে স্তুপ করে রাখা হয়। এর পাশেই একটি বাজার ও একাধিক মার্কেট রয়েছে। ফলে ময়লা-আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধে পথচারীসহ আশপাশের এলাকার মানুষের টেকা দায়। মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় অনেকেই উৎকট গন্ধে বমি করে ফেলেন। এমনকি এতে পৌরসভা ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা পৌর নাগরিকদেরও দুর্ভোগের সীমা নেই। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কথা বললেও পৌর কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছেন না।
মহল্লা গুলোতে নেই কোন নির্দিষ্ট ডাষ্টবিন বা ময়লা ফেলার স্থান। দু’একটি ডাষ্টবিন থাকলেও তা ভেঙ্গে গিয়ে সেগুলোই ডাষ্টবিনে পরিনত হয়েছে। যা উপচে পড়ে দূর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় পথচলা দায় হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর। প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হওয়া সত্বেও পৌর এলাকার যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। পৌর এলাকার বিভিন্ন অলিগলির মোড়ে পলিথিন ভর্তি ব্যাগ ভর্তি পচনশীল ময়লায় স্তুপ তৈরী হলেও তা সময় মতো পরিস্কার করা হচ্ছে না। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনায় নোংরা হয়ে রয়েছে। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল যেমনি বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ময়লা আবর্জনার পচাঁ দুর্গন্ধে পথচারীদেরকেও পড়তে হচ্ছে দূর্ভোগে।
সাভার পৌর এলাকার বিভিন্ন অলিগলি ও মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকার গুলোতে নির্দিষ্ট দূরত্বে নেই কোন কোন নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান। ফলে মহল্লাবাসী ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ড্রাম বসিয়ে বা গলির মোড়ে বা বৈদ্যুতিক খুটির গোড়ায় ফেলছে গৃহস্থালির ময়লা আবর্জনা। এতে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে গৃহস্থালির আবর্জনা ভর্তি পলিথিনের ব্যাগ। দু’একটি ডাষ্টবিন থাকলেও তা সংস্কারের অভাবে নিজেরাই ডাষ্টবিনে পরিনত হয়েছে। ফলে ডাষ্টবিনে ময়লা ফেললেও তা সহজেই উপচে উঠে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে। ডাষ্টবিন থাকা সত্বেও তার সঠিক ব্যবহার না করার কারণে সড়ক জুড়ে পড়ে থাকছে পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্যাতস্যাতে কাদাপানি। এতে পথচারীদেরও দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সাভার পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৭ লক্ষাধিক লোক বসবাস করে। এত সংখ্যক লোকের বসবাসের কারণে তাদের গৃহস্থালির উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার পাশে ড্রামে ও স্তুপকারে জমা করে রাখছে। পরে তা ময়লার ভ্যানে ভরে তা ফেলা হচ্ছে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর বা নিচু জমি ভরাট করার জন্য চুক্তি ভিত্তিক পৌরসভার সংগ্রহ করা ময়লা আবর্জনা ওইসব নিচু জমিতে ফেলে ভরাট করারও অভিযোগ রয়েছে। এসব ময়লা আবর্জনা সড়ক-মহাসড়কের পাশে ফেলার কারণে একদিকে যেমন বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, অন্যদিকে সড়ক মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা ময়লার উৎকট গন্ধে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রাজালাখ ফার্ম, কর্ণপাড়া খাল সংলগ্ন ব্রীজ এলাকায় মহাসড়কের পাশে স্তুপ আকারে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এসব স্থান দিয়ে পথচারীরা নাকে রুমাল চেপে চলাফেরা করে।
পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকবর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা মাসিক টাকা প্রদান করি কিন্তু পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত ময়লা আবর্জন পরিস্কার করতে আসে না। মহল্লা ভিত্তিক ডাষ্টবিন এবং নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই তাদেরকে গৃহস্থালির ময়লা আবর্জনা বাড়ির আঙ্গিনায় নিকটবর্তী স্থান ও রাস্তা বা গলির মোড়ে ফেলতে হয়। পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মিরা ৩/৪দিন পরপর ভ্যানে করে ময়লা আবর্জনা নিতে আসে।
চিকিৎসক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য রাখলে তার দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দুর্গন্ধের সাথে থাকা জীবানু শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে মানব দেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
সাভার নদী ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ ড. রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান দরকার। পৌরসভা এলাকায় যত্রতত্র ময়লা ফেলায় পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) টিআইবি’র সদস্য তায়েফুর রহমান বলেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা পৌরসভার প্রধান সমস্যা। কেন পৌর কর্তৃপক্ষ এর সমাধান করছে না তা বোধগম্য নয়।
সাভার পৌরসভার মেডিকেল অফিসার কাজী আয়েশা সিদ্দিকা ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নেই স্বীকার করে বলেন, এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের ন্যায় আমরাও এর দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। পৌর ভবনের ভেতরে দুর্গন্ধের মধ্যেই আমাদের অফিস করতে হচ্ছে।
সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ সমস্যায় আমরা সকলে ভুক্তভোগী। ইতিমধ্যেই পৌর এলাকার ঘাসমহলে ১৪ শতাংশ জায়গা ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে সেখানে সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন করা হবে। এছাড়া পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য আরো জায়গা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। পেলেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com