
উত্তরের তিস্তা নদীর ভাঙ্গন যুদ্ধে হারাতে হয়েছে স্ত্রী-সন্তান,আবাদী জমি, গবাদীপশু, বাড়ি-ভিটেসহ অনেক কিছুই। তাদের মধ্যে অন্যতম মৌলভী মোহাম্মদ আব্দুল আলী সিকদার। ৯৫ বছর বয়সে একাকিত্ব আর অসহায়ত্বে ভুগছেন তিনি। সংসার জীবনে স্ত্রী, ২ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে পাড় করছিল।
জীবনের কালো অধ্যায়ের শুরু ১৯৯৬ সালে তিস্তায় শুরু হয় জীবন ক্ষয়ি মহাপ্লাবন যার ফলে নদীর দু’তীরের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার বিলিন হয়ে যায়। তারই দু’বছর পরে ১৯৯৮ সালের জুন মাসে হঠাৎ অচমকা গুজরাত ঘুর্ণিঝড়। সেই সময়ে মৌলভী মোহাম্মদ আব্দুল আলী সিকদারকে হাড়াতে হয় গবাদিপশু, ফসলি জমিসহ বসত ভিটে। আশ্রয় নিতে হয় গাইড বাধে(ওয়াপদা বাধ) পানি নামার শেষে পৈত্রিক বসত ভিটার মায়ায় ফিরে গিয়ে পূণরায় ঘর-বাড়ী তৈরী করেন। তারও দু’বছর পরে সংসার জীবন থেকে বিদায় নেন জীবন সঙ্গীনি জামেলা খাতুন, একদিকে বয়সের ভার অন্যদিকে সঙ্গীনি হারার একাকিত্ব।
অপরদিকে নদী ভাঙনে প্রতিবছর সরাতে হয় ঘর-বাড়ী, ভাঙ্গনের ফলে ১২ বছরে প্রায় ১৫বার সরাতে হয়েছে।
এক পর্যায়ে আব্দুল আলী সিকদারের শরীরে(বাহুতে) চলে আসেন ক্লান্তিলঙ্ঘন মনে আশার বসবাস কবে জানি ফিরে পাবো পৈত্রিক সেই বসত ভিটে আর জমিজমাটুকু। তবে একটুকুও ক্লান্ত হয়নি রাক্ষুসে তিস্তা। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে আর ছেলেরা অভাবের তাড়নায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান জীবিকা নির্বাহের কাজে।
মৌলভী মোহাম্মাদ আব্দুল আলী সিকদার জাগো বুলেটিন কে জানান, ঘুর্ণিঝড় দিয়া শুরু তারপর আসিল বান(বন্যা) বাপ-দাদার সবে হারানুং আসির নাগিল সরকারের বাধত। বাপের পাছিনুং পাঁচ বিশ ভুই(জমি) চোখের সামনতে ভাঙ্গি গেল নদীত। এক সময় মোরে বাপ-দাদার মানষি খেয়া পরি বাঁচি ছিল এলা মোকে মানষির খাবার নাগে। চেয়ারম্যান বেটা একখান ভাতা দিছে ওইকানের টাকা দিয়া কি দিন মোর চলে। বাবারে, ১৯৯৮-২০১০ সাল পর্যন্ত ১০/১৫ বার বাড়ি ভাঙছুং। কথা গিলা মনত পইলে হৃদয়টা ফাটি পরে। কবে যে পাইমো ওই ভুই (জমি) ফেরৎ।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com
