পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌর শহরে জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে মৃত আবুল কাসেম খানের পুত্র মো. বাহাদুর খান (৪২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত ওই যুবক বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে গলাচিপা উপজেলার পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ড কলেজ রোড এলাকায় নিজ বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগীর ভাই মো. সুমন খান (৩৮) বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে গলাচিপা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নম্বর জিআর ১৯/২১৬। অভিযুক্তরা হলেন-উপজেলার একই বাড়ির আবু তালেব বাবুলের তিন পুত্র মো. শাকিল (২৬), মোঃ নাঈম (৩০), মোঃ তামিম (২১) ও মোঃ আবু তালেব বাবুল (৫০) যার পালক পিতা মৃত মোতালেব খান। আহতের পরিবারের লোকজন ও মামলা সূত্রে জানা যায়, জায়গা জমি ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে বাহাদুরের পরিবার ও তার চাচাতো বোন আসমা আক্তারের (৪১) এই দুই পরিবারের সাথে আবু তালেব বাবুলের দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে একাধিক বার বিরোধ ও সালিশ বৈঠক হয়েছে কিন্তু বিরোধ মিমাংসা হয়নি। ঘটনার দিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি, গালাগালি ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয় অভিযুক্তরা। এতে নিষেধ করলে অভিযুক্ত শাকিল গংরা ক্ষিপ্ত হয়ে আসমা আক্তার ও তার স্বামী ইলিয়াস কবিরের ওপর হামলা করে। এতে বাহাদুর প্রতিবাদ করে এবং বাঁধা দিলে পূর্ব বিরোধের জেরে তাঁর উপর দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে শাকিল ও তার সঙ্গীরা। এসময় এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে তাকে নিলা ফুলা জঘম করে। শাকিল তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে বাহাদুরকে কোঁপ দিলে মাথার নিচে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তার ডাক চিৎকারে স্বাক্ষীরা ছুটে আসলে তাদেরও মারধর করে নিলা ফুলা জঘম করে হুমকি ধমকি দিয়ে আসামিরা চলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক বাহাদুরের অবস্থা আশংকাজনক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার্ড করে। মামলার বাদী সুমন খান বলেন, তার ভাই বাহাদুরকে একা পেয়ে শাকিল ও তার সঙ্গীরা মিলে মারধর করেছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে চাপাতি দিয়ে শাকিল হত্যার উদ্যেশে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এখন তার ভাই হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি। আসমা আক্তার বলেন, আবু তালেব বাবলু তার বাবার পালিত ছেলে এবং তার বাবা মৃত হাজী আবদুল মোতালেব খানের একমাত্র সন্তান তিনি। তার আর কোন সন্তান নেই। কিন্তু বাবলু পালিত ছেলে হওয়া স্বত্বে সম্পত্তির ভাগ নিয়ে ঝামেলা করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিরোধ হয়েছে, স্থানীয় ভাবে সালিসি হয়েছে। পৌরসভা থেকে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়েছে সেখানে আবু তালেব বাবলুকে ওয়ারিশ দেখানো হয়নি। কিন্তু বাবুল তা মানতে নারাজ। এসব নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন বাবার ঘরে থাকা বৃদ্ধ অসুস্থ মা সোখিনা বেগম কে দেখতে গেলে বাবলুর ছেলেরা গালাগালি ও খারাপ ব্যবহার করে। পরে এক পর্যায়ে তর্কাতর্কিতে জড়ায়। এসময় শাকিল ও তার সঙ্গীরা আমাকে ও আমার স্বামীর ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং আমার গলায় থাকা ১ ভরি ২ আনা ওজনের স্বর্নের চেইন নিয়ে যায়, যার বাজার মূল আনুমানিক ৯০ হাজার টাকা। এসময় বাহাদুর বাঁধা দিলে৷ তার ওপর হামলা করে শাকিল চাপাতি দিয়ে কুঁপিয়ে গুরুতর জখম করে। আসমা বেগমের স্বামী ইলিয়াস কবির বলেন, আসামীরা পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এর আগেও একাধিকবার হামলা করেছে। তারা প্রকৃত পক্ষে নেশাগ্রস্ত ও খারাপ চরিত্রের লোক। ঘটনার পরও তারা বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই ও প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই। অভিযুক্ত মো. শাকিল এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, তারা কাউকে কোঁপ দেয়নি ও মারধর করেনি। এছাড়া আরও বলেন হাতাহাতি হয়েছে সেসময় টিনের সাথে লেগে বাহাদুরের মাথার পেছনে কেটে গেছে। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com