
ময়মনসিংহে কোন ধরণের তদবির ও সুপারিশ ছাড়াই ১৯ জন নারীসহ ১৪২ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পেয়েছেন। মাত্র দেড়শত টাকা খরচে উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বুধবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্স মাঠে নিয়োগ পাওয়াদের নাম ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান।
পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ লাইন্স মাঠে শুরু হওয়া ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষা ময়মনসিংহ জেলা থেকে অনলাইনে চাকরি প্রার্থীরা একশত ২০ টাকা করে ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা এবং অনলাইন ফি ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করেন। নিয়োগ পরীক্ষার শুরুতে ৪৮২২ জন অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে টানা তিনদিনের বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে ১৪০৬ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে লিখিত পরীক্ষায় সফলতার সাথে ৫৬৮ উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহে নিয়োগযোগ্য শূন্য পদের বিপরীতে সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি অনুসরণ করে মেধাক্রম অনুযায়ী ১৯ জন নারীসহ ১৪২ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। এর মাঝে পুরুষ সাধারণ কোটায় ৯০ জন, পুলিশ পৌষ্য কোটায় ১২ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৬ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি ৩জন এবং আনসার ভিডিপি কোটায় ২ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া অপেক্ষমান রয়েছে ১১ জন। এতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আনসার, মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের পোষ্য কোটাসহ সাধারণ কোটা, অসহায়, হতদরিদ্র, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষক, পিতৃহারা অসহায় পরিবারের সদস্যরা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছে। মেডিকেল বা পরবর্তীতে বেরিফিকেশনকালে কোন প্রার্থী বিবাহিত, মামলা কিংবা অন্যকোন ধরণের রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিপরীতে অপেক্ষমান তালিকা থেকে পুরণ করা হবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণাকালে নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোরশেদা ও শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদ হোসেন সাথে ছিলেন।
পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান আরো বলেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ডঃ বেনজীর আহমেদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সততার সাথে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ সম্পন্ন করেছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। গত দুটি নিয়োগ থেকে এই পদ্ধতিতে শতভাগ অনিয়ম, দুর্নীতির উর্দ্বে থেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের জন্য পুলিশ বাহিনীকে একটি সুশৃংখল ও শক্তিশালী বাহিনী গড়তে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে নিয়োগ বিষয়ে কোন অনৈতিকতার সুযোগ নেই। সুস্থ্য, সবল, যোগ্য ও মেধাবীরা নিয়োগ পেয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাত্র দেড় শত টাকা খরচে চাকুরী পেয়েছেন। আপনারা চাকুরী নয়, জনগনকে সেবার উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালন করবেন। চাকুরীকালে কাউকে অনৈতিকভাবে হয়রানী করবেন না। পুলিশ সুপার আরো বলেন, অতীতে নিয়োগ প্রাপ্তদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ হতো। এবার কোন ধরণের ফি ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্তদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে।
বিনা টাকায় নিয়োগ পাওয়া ঈশ্বরগঞ্জের মহেষপুর গ্রামের দেলোয়ার কোন ধরণের খরচ ছাড়া স্বচ্ছ পক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে আবেগে আপ্লুত। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার বাবা শাহজাহান একজন রাজজোগালী (নির্মাণ শ্রমিক সহকারী)। না খেয়ে প্রতিদিন আমাকে কলেজে যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা দিয়েছেন। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশ পধান ও ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দেলোয়ারের পিতা শাহজাহান বলেন, আল্লাহপাক আমার দিকে তাকিয়েছেন, তাই বিনা পয়সায় ছেলের চাকুরী হয়েছে। তারাকান্দার ফতেহপুরের মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে নিয়োগ পাওয়া সিবলী সাদি বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ঢাকা শহরে বাসায় ঝিয়ের কাজ করে আমাদের সংসার চালান। সেই টাকায় আমি পড়ালেখা করেছি। আমার বিনা পয়সায় চাকুরী হয়েছে। আমি আমার মায়ের দুঃখ অনেকটা কমাতে পারবো। এ জন্য তিনি পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দোয়া চেয়েছেন। আনসার ভিডিপি পরিবারের সদস্য পিতৃহারা ত্রিশালের নিয়োগ পাওয়া মরিয়ম আক্তার হেপি স্বচ্ছ পক্রিয়ায় বিনা খরচে নিয়োগ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com
