জ্বালানী তেল- বিদ্যুৎ ছাড়াই ফেলে দেওয়া কন্টেইনার-বোতলের মাধ্যমে হাওয়া শক্তিকে ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন যন্ত্র আবিস্কার করেছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী শাহীন।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও তার আবিস্কারের তালিকায় রয়েছে ভূমিকম্প সতর্কতা এলার্ম সিস্টেম, চুরি রোধে অনলাইন মেসেজিং সিস্টেম।
মোবাইল ফোনের গোপনীয়তা রক্ষার্থে রয়েছে এমন এক ধরনের বিশেষ চশমা। যা মোবাইলের স্ক্রিনকে ব্যাবহারকারীর চোখে ঠিকঠাক দেখালেও বাকী সবার চোখে তা দেখাবে সাদা।
বর্তমানে তার ছাড়া বিদ্যুত সঞ্চালন বিষয়ে গবেষণা করছেন এ ক্ষুদে বিজ্ঞানী। অল্প দুরত্বে সাফল্য পেলেও তা ৩ কি.মি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
এলাকায় ‘বিজ্ঞানী‘ নামে পরিচিত শাহীনের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খুকশিয়া গ্রামের মৃত শাহারুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি।
শাহীন জানায়, ছোট বেলা থেকেই বিশেষ কিছু দেখলেই তা নিয়ে গবেষণা- আবিস্কারের অদ্ভুত এক আগ্রহ সৃষ্টি হয় মনে।
যেখানেই কোন সমস্যা দেখেছেন সেটা সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। হাতের কাছে পাওয়া জিনিষপত্র দিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন কোন যন্ত্র বা ডিভাইস। একের পর এক সফলতা তাকে আরো উদ্বুদ্ধ করেছে এগিয়ে যেতে। এভাবে তার থলিতে জমেছে ৪০ টির অধিক সাফল্য। তার উদ্দ্যেশ্য এসব যন্ত্র বা ডিভাইস গুলো সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে পৌছে দেয়া। সেই সাথে গবেষণাকে আরো এগিয়ে নেওয়া।
তার এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ সংকট। সরকারি- বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চলমান এ অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রাখতে দৃঢ় প্রত্যয়ি শাহীন।
তিনি আরো জানান, ২০২১ সালে স্থানীয় নাকাইহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ শাহীন। পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে তার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া হয়নি। বর্তমানে নাকাইহাট ডিগ্রী কলেজে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
কলেজে ভর্তির পরপরই ২০২৩ সালে ৪৪তম বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেন শাহীন। মেলায় তার আবিস্কার গুলো উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে পুরষ্কার এনে দেয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি।
শাহীনের মা শোভারাণী জানান, বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আবিষ্কারের নেশা তার ছোটবেলা থেকেই।
পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে শাহীন ৪র্থ। স্বামী মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে ৩ ছেলে আর ২ মেয়েকে মানুষ করেছেন তিনি। ছেলে ধারাবাহিক অর্জনে তিনি গর্ববোধ করলেও অর্থসঙ্কটে গবেষণা-আবিস্কার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ছেলের সঙ্গে ব্যাথিত তিনিও।
নাকাইহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ আলী প্রধান বলেন, শাহীন অত্যন্ত প্রতিভাবান। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও দিনভর সময় দেয় নতুন কিছু আবিষ্কারে। আবিষ্কারের অভিনবত্ব তাকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান এনে দিয়েছে। আরো বেশ কিছু কাজ সে হাতে নিয়েছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করবে বলে বিশ্বাসী তিনি।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com