
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।
শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি পদ্মা সেতুর মিথ্যা দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছিল সেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মিথ্যা অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের যে মানসিক যন্ত্রণা হয়েছিল, সেই কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে কীভাবে একটি পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। সেই যন্ত্রণা ভোগ করেছে আমার বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, আমার উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই যন্ত্রণা ভোগ করেছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত, সত্যের জয় হয়েছে।
এ সময় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, যারা সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। যারা এখানে বসবাস করত, তারা জমি ছেড়ে দিয়েছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। যদিও তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বাধা উপেক্ষা করে আজ ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের জেদ ছিল–এ সেতু নির্মাণ করবই। সেই আত্মবিশ্বাসে আজ আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। যদিও মিথ্যা অভিযোগে দুই বছর দেরি হয়েছে। তবু আমরা দমে যাইনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায় বলতে চাই: আমরা মাথা নোয়াবার নই। আমরা কখনো মাথা নোয়াব না। শেখ মুজিবুর রহমান কখনো মাথা নত করে চলেননি। আমরাও কখনো নত থাকব না।
তিনি বলেন, এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং প্রত্যয়। আমরা এই সেতু করবই–সেই জেদ। ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়েছে; কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি।
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সকাল ১০টার দিকে তিনি সেখানে পৌঁছান।
বক্তব্য শেষে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেন। মাওয়া প্রান্তের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে তিনি সেতু ও ম্যুরাল-২-এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানেও মোনাজাতে যোগ দেবেন তিনি।
এরপর মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসমাবেশে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com
