আজ দুপুরে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশের সূর্য সন্তান মো: ফুলে হোসেন৷ মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা সৈনিক ফুলে হোসেন আজ মগবাজারস্থ তার বাসায় আনুমানিক ১২ টার দিকে ইন্তেকাল করেন।
অধ্যাপক মহম্মদ ফুলে হুসেন। তিনি-শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক। বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। দুই দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষাদান করেছেন। স্কুল জীবন থেকে সচেতনভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত । প্রথমে আওয়ামী লীগে, পরবর্তীতে ন্যাপ নেতা । ভাষা আন্দোলনে স্থানীয় সংগঠক। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী। গুণী শিক্ষক। ছাত্রদের শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে সফল তিনি। প্রগতিশীল, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা বা সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী। ভয়-ভীতি, অত্যাচারে পিছপা হননি কখনও। নানা বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী। আলোকিত মনের অধিকারী ছিলেন।
কর্মজীবন : মহম্মদ ফুলে হুসেন ১৯৬০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করে নীলফামারী কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে রংপুর কলেজ প্রতিষ্ঠায় ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের (পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর) সঙ্গে একযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দু’বছর পর ১৯৬৫ সালে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত সেই কলেজেই কর্মরত ছিলেন। ফুলে হুসেন ১৯৬৮-১৯৭০ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশস্থ সোভিয়েত ইউনিয়নের ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের নিউজ সেকশনের চিফ এডিটরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে পুনরায় শিক্ষকতার পেশায় ফিরে যান এবং চুয়াডাঙ্গা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ফুলে হুসেন তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৬ এপ্রিল ভারতে আশ্রয় নেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে দেশে ফিরে কলেজের কার্যভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে লালমনিরহাট কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে নরসিংদীর রায়পুরা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ: মহম্মদ ফুলে হুসেন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা অবস্থানকালে তিনি সাউথওয়েস্ট কমান্ড (পরবর্তী সময়ে ৮ নম্বর সেক্টর) এর বেসামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে লিয়াজোঁ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমান হামলার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফরাসি টেলিভিশন টিম এবং সেই ভিডিওটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হওয়ায় বিশ্ববাসী পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হয়। ফুলে হুসেন সেদিন ফরাসি টেলিভিশন টিমকে তাদের কাজে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতাদান করেন । তিনি ৮ এপ্রিল সাউথওয়েস্ট কমান্ডের বাণিজ্য মিশনের সদস্য হিসেবে কলকাতা যান।
সন্তান: তিন পুত্র। জ্যেষ্ঠ- লেলিন মাহমুদ হুসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস। বর্তমানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজার। তাঁর স্ত্রী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফাওজিয়া রাশেদী। দ্বিতীয় পুত্র- ডা. তারেক মাহমুদ হুসেন, এমডি, পিজিডি, এফআরআইপিএইচ। তাঁর স্ত্রী ফারজানা তারেক, কবি ও ঔপন্যাসিক। তৃতীয় পুত্র- মাহমুদ কায়সার। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। স্ত্রী সৌরভী আক্তার কুলসুম।
আজ আসরের নামাজের পর তার জানাজার পর তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত করা হবে৷
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com