২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য এই বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিগত নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৬) লিডার সামিটে দেয়া জাতীয় বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সুরক্ষায় চার দফা দাবি তুলে ধরে বিশ্বের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের নৈতিক কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। এ দাবিসমূহ হচ্ছে- ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন’ (এনডিসি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য রেখে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া এবং বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেয়া।
তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ৬.৭৩ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রাপ্তি সাপেক্ষে আরও ১৫.১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিত অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং ২০০৯ সালে প্রণীত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা’ হালনাগাদকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৮,৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি বাতিল করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৬টিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য অথবা গ্যাস-ভিত্তিক করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের ৪০ শতাংশ জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে এ পর্যন্ত দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত ১৩ বছরে ৯টি জাতীয় উদ্যান, ১৮টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ৩টি ইকোপার্ক, ১টি উদ্ভিদ উদ্যান, ২টি মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া এবং ২টি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকাসহ নতুনভাবে মোট ৩৫টি রক্ষিত এলাকা সৃজন করা হয়েছে, যার ফলে বর্তমানে দেশে রক্ষিত এলাকার সংখ্যা মোট ৫১টিতে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দেশে ৯৫ হাজার ২৬৫ হেক্টর ব্লক, ২৬ হাজার ৪৫৩ সিডলিং কিলোমিটার স্ট্রিপ এবং ৬৮ হাজার ১১৩ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বিলুপ্তপ্রায় ১০৬টি বনজ ও ২৪০টি ঔষধি বৃক্ষ প্রজাতি সংরক্ষণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আবার জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ‘ন্যাশনাল ফরেস্ট ইনভেন্টরি’ রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। সমগ্র সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়নে স্মার্ট (স্পেশিয়াল মনিটরিং এন্ড রিপোর্টিং টুলস) পেট্রোলিং চলমান আছে। পাশাপাশি, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সুন্দরবন সংলগ্ন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯টি ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জলবায়ু ঝুঁকি থেকে টেকসই ও জলবায়ু সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com