আফিফ হোসেন যখন উইকেটে এলেন, তখন ৭.৪ ওভারে ২৮ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ। আর মেহেদি হাসান মিরাজ ক্রিজে আসার সময় দলের রান ১১.২ ওভারে ৪৫, নেই ছয় উইকেট। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, লিটন, ইয়াসির— স্বীকৃত, নির্ভরযোগ্য সব ব্যাটারই সাজঘরে। আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রান তখন মনে হচ্ছে সুদূর পরাহত।
টিভি সেটের সামনে থেকে দর্শকরাও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু না, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বুকে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে পড়ে থাকলেন আফিফ-মিরাজ। দর্শকদের বাধ্য করলেন টিভিতে চোখ ফেরাতে। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আর ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের এক অবিশ্বাস্য জুটি গড়ে দলকে এনে দিলেন এক রোমাঞ্চকর জয়। ‘নিশ্চিত পরাজয়’ বিবেচিত ম্যাচও অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়লেন আফিফ-মিরাজ।
আফিফ হোসেন শেষ পর্যন্ত ১১৫ বলে ৯৩ আর মেহেদি হাসান মিরাজ ১২০ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৭ম উইকেট থেকে এই জুটি তোলেন ১৭৪ রান।
২১৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক ফজলহক ফারুকিতেই লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশের টপ-মিডল অর্ডার। একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। লিটন দাস, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এরপর ইয়াসির আলী চৌধুরীকেও বানালেন নিজের শিকার। এরপর মুজিব এসে সাকিবকে তুলে নিয়ে মাত্র ২৮ রানে বাংলাদেশের অর্ধেক উইকেট তুলে নিল আফগানরা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৩ রানের মাথায় ফজল হক ফারুকির বলে উইকেটের পেছনে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লিটন। আম্পায়ার প্রথমে আউট না দিলেও আফগানিস্তান রিভিউ নিয়ে সফল হয়। আউট হওয়ার আগে লীটন ৮ বলে ১ রান করেন।
এরপরেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। দলীয় ১৪ রানে তামিম, ১৮ রানে মুশফিকুর রহিম এবং ইয়াসির আলী ফিরলেন প্যাভিলিয়নে।
লিটনের ফেরার ওভারেই অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফিরলেন ফজলহকের বলেই। ৮ বলে ৮ রান করে তামিম এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ফিরলেন দলীয় ১৪ রানে। এবারও আম্পায়ার আউট দেননি, পরে রিভিউতে দেখা গেল বল তামিমের পেছনে স্টাম্পে আঘাত করত।
চতুর্থ ওভারটা কোনোরকমে কাটিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিক। তবে পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ফিরলেন মুশফিক। আঘাত হানলেন সেই ফজলহক ফারুকিই। নিজের আগের ওভারে তিন বলের ব্যবধানে লিটন ও তামিমকে ফেরানো ফজল এবার এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন মুশফিককে। মুশফিক রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু রিপ্লে’তে দেখা গেল বল ব্যাটে লাগার আগেই প্যাডে লেগেছে। মুশফিক ফিরলেন ৫ বলে মাত্র ৩ রান করে। এতেই ৪.১ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট হাওয়া বাংলাদেশের!
অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বি রানের খাতাটাও খুলতে পারলেন না। ওভারের ষষ্ঠ বলটিতে ইয়াসিরের অফ স্টাম্প উপড়ে ফেললেন ফারুকি। এতেই ১৮ তে চার উইকেটের পতন বাংলাদেশের। ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসানও টিকতে পারলেন না বেশি সময়। ১৫ বলে ১০ রান করে সাকিব ফিরলেন দলীয় মাত্র ২৮ রানের মাথায়। এবার বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে আঘাত হানলেন মুজিব উর রহমান।
তবে আফগানদের উল্লাস থেমেছে সেখানেই। এরপর চট্টলায় আফিফ এবং মিরাজ গাঁথা। ১২তম ওভার থেকে ৪৯তম ওভার পর্যন্ত খেললেন এই দুই ব্যাটার। ২২৫ বলে ১৭৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দিয়ে মাঠ ছাড়লেন আফিফ ও মিরাজ। ক্রিকেট ইতিহাসে ৭ম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি গড়েছেন আফিফ-মিরাজ।
আফগানিস্তানের হয়ে চারটি উইকেট নেন ফজলহক ফারুকি। ১০ ওভারে একটি মেডেনে ৫৪ রান দিয়ে লিটন, তামিম, মুশফিক এবং সাকিবের উইকেট নেন এই পেসার। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন মুজিব উর রহমান এবং রশিদ খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:-
আফগানিস্তান: ৪৯.১ ওভার; ২১৫/৪; (গুরবাজ ৭, ইব্রাহিম ১৯, রহমত ৩৪, হাসতউল্লাহ ২৮, নাজিবুল্লাহ ৬৭, নবী ২০, গুলবাদিন ১৭, রশিদ ০, মুজিব ০, ইয়ামিন ৫, ফারুকি ০*); (মোস্তাফিজ ৯.১-০-৩৫-৩, তাসকিন ১০-০-৫৫-১, সাকিব ৯-১-৫০-২, শরিফুল ১০-১-৩৮-২, মিরাজ ১০-৩-২৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-১)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভার; ২১৯/৬; (তামিম ৮, লিটন ১, সাকিব ১০, মুশফিক ৩, ইয়াসির ০, মাহমুদউল্লাহ ৮, আফিফ ৯৩*, মিরাজ ৮১*); (ফজলহক ১০-১-৫৪-৪, মুজিব ১০-০-৩২-১, আহমেদজাই ৫-০-৩৫-০, রশিদ ১০-১-৩০-১, নবী ১০-১-৩২-০, গুলবাদিন ৩.৫-০-২৫৮-০)।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৭ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জয়ী।
/শুভ /
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com