ঢাকারবিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

ফ্রিলান্সার স্বামীর অনুপ্রেরণায় স্ত্রীও ফ্রিল্যান্সার, মাসে আয় ৫-৬ লাখ

জাগো বুলেটিন
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সিরাজগঞ্জের আবুজর হোসেন জিম ও লিজা আক্তারের পরিচয় ২০১৫ সাল থেকে। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় ভালোবাসায়। ২০২১ সালে বিয়ে করেন তারা। আবুজার হোসেন পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার। বিয়ের পর স্বামী আবুজার হোসেনের অনুপ্রেরণায় লিজাও শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন স্বামী স্ত্রীর দুজনে ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় করেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।

শুরুর গল্প জানতে চাইলে স্ত্রী লিজা আক্তার বলেন, ‘পরিবারের সবাই ভাবতো আমার স্বামী বেকার। তাই আমার পরিবার বিয়ে দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। পরে আমি বুঝিয়ে বলার পর তারা রাজি হন’।

তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পূর্ব থেকেই আমার স্বামী ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করেন। ঘরই তার অফিস। একদিন আমাকে বললেন তুমিও তো চাইলে আমার সাথে বসে কাজ করতে পারো। এতে দুইজনেরই সময় কাটবে ও ইনকাম হবে। আমিও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমি তো কাজ জানিনা। এক্ষেত্রে আমার স্বামী আমার প্রথম টিউটর। তিনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিং এর সব কাজ শিখিয়ে দিতে লাগলো। দীর্ঘ এক বছর পুরোপুরি কাজ শিখে, আমার স্বামীর পাশে থেকে আমিও শুরু করলাম ফ্রিল্যান্সিং’। এখন এ থেকে আমার নিজরই আয় হয় দেড় দুই লাখ টাকা। আমার স্বামী ও আমার দুইজনে মিলে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার মতো আয় হয়’।

শুধু তাই না তারা ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি এলাকার বেকার নারী ও পুরুষদেরও ফ্রিল্যান্সিং শেখায়। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা একদম খারাপ তাদের সম্পুর্ন বিনামূল্যে তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

স্বামী আবুজার হোসেন জীম বলেন, ‘আমার স্ত্রী ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করছে, এটা আমার খুব ভালো লাগছে। যদিও ফ্রিল্যান্সিং এর পথে আমি তাকে এনেছি। দুইজনে মিলে ঘরে বসে আয় করতে পেরে আমরা আনন্দিত।

শুরুর গল্প জানতে চাইলে জিম আরও বলেন, ‘কিছু শিখবো বলে ২০০৮ সালে বাবার কাছ থেকে কম্পিউটার কিনে নিয়েছিলাম। ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত নিজে নিজে চেষ্টা করে কিছুই শিখতে পেরে উঠি নাই। তখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পরতাম। এমনিতে কম্পিউটার এর বেসিক সব পারতাম। চাপ ছিলনা কিছু একটা করতে হবে, বাবা স্কুল মাস্টার ছিলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি জমি ছিলো, তাই পড়াশুনার খরচ দিতে বাবার বেগ পেতে হয়নাই। আমরা দুই ভাই, দুজনেই ঢাকাতেই পড়াশুনা করতাম। পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করবো এটাই পরিবার থেকে এমনকি আমারও এমনটাই চিন্তা ছিলো। কম্পিউটার এর সামনে বসলেই কেমন জানি মনে হতো এখান থেকেই কিছু একটা করবো। ২০১৩ সাল, পুরান ঢাকায় একটা আইটি ট্রেনিং সেন্টার পেলাম। খোজ খবর নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ওয়ার্ডপ্রেসের কোর্সে’ ।

তিনি আরও বলেন, ‘কোর্স শেষে সুযোগ পেলাম টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করার। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম বায়ার পেলাম বাংলাদেশি, প্রথম পেমেন্ট ছিল ৩০,০০০। প্রথম ইনকাম হিসেবে খুশি ছিলাম। তারপর শুরু করলাম ফাইভার মার্কেট প্লেসে কাজ করা। এখনকার মত এতটা সহজ ছিলোনা। নতুন একাউন্ট খুলেই কাজ আশা শুরু করে এমনটা না। তবে বেশ কিছুদিন পর কাজ পেলাম। টানা ২ রাত জেগে কাজগুলো জমা দিয়েছিলাম। কাজগুলো তখন আমার কাছে ছিলো মহামুল্যবান। সারাদিন রাত মাথায় শুধু কাজ নিয়ে চিন্তা। তারপর ২০১৫ সালে অনার্স শেষ করলাম। বাবা মা চাকরির কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু আমি একটা চাকরির জন্য এপ্ল্যাই করিনাই, বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তখন কোটা
চালু ছিল। চাইলেই একটা চাকরিতে চেষ্টা করতে পারতাম। কিন্তু আমার মাথার মধ্যে ছিল অয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ভুত। চাকরি বাকরি সব চিন্তা বাদ দিয়ে আরও বেশি কিভাবে শেখা যায় সেই চিন্তা শুরু করলাম। আবার একটা ১২০০০ টাকার কোর্সে ভর্তি হই। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এখন মাস শেষে লাখ টাকা ঘরে নিয়ে আসি। পার্সোনাল ক্লাইয়েন্ট সহ মার্কেট প্লেস মিলে কাজ করছি’।

লিজার সাথে পরিচয়ের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৫ শেষের দিকে লিজা নামে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। না দেখে প্রেম। সে সময় মোবাইলের এতটাও প্রভাব ছিলোনা। আমার কাছেই তার প্রথম কাজ শেখা। আমি ইমেইল মার্কেটিং শিখিয়ে সেও কাজ শুরু করলো ২০১৭ সাল থেকে। তারপর অনলাইনে যখন যেটা চায় কাজ শিখতে আমি না করিনি। গ্রাফিক্স ডিজাইন , ইউএক্স ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং। খুবই পরিশ্রমী সে। অনেক বেশি ধৈর্য যার কারনে যেটা শেখা শুরু করে সেটা খুব ই ভালো ভাবে শিখে এবং সব গুলো থেকে ভালো ইনকাম করে। ২০২১ এ এসে বাবা মা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে আমার বউ করে। নতুন সংসার সাথে আবার কাজ। সব মিলিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়। সারা রাত জেগে কাজ আবার ফজর পর থেকে সংসারের কাজ। ওকে দেখলে অবাক হই মাঝে মাঝে। খুব অল্প সময়েই সে সাফল্য পেয়েছে। ও মাসে এখন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতও ইনকাম করেন’।

লিজা ও আবুজার হোসেন জিমের ইচ্ছা তারা বড় পরিসরে বেকার যুবকদের ফ্রিল্যান্সিংর এর প্রশিক্ষণ দেবে। তাদের পরামর্শ, চাকরির পিছনে না ছুটে নিজে কিছু করা। হোক সেটা উদ্যোক্তা, ব্যবসা ও ফ্রিল্যান্সিং করা।

লেখকঃ সাজেদুর আবেদীন শান্ত, ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com