কাতার বিশ্বকাপে আগামীকাল সোমবার স্টেডিয়াম ৯৭৪’এ শেষ ষোলর ম্যাচে পাঁচবারের বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মোকাবেলা করবে উজ্জীবিত দক্ষিণ কোরিয়া। আরো একটি অঘটনের জন্ম দিয়ে সন হেয়াং-মিনের নেতত্বাধীন এশিয়ান পরাশক্তিরা এবার ব্রাজিল বাঁধা পেরুতে চায়।
অন্য দিকে গোল ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডকে পিছনে ফেলে গ্রুপ-জি’র চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই কাল মাঠে নামতে যাচ্ছে সেলেসাওরা। আবার শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে হতবাক করে দিয়ে গ্রুপ-এইচ’র রানার্স-আপ পজিশন নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়া।
ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে শুক্রবার পরাজিত হওয়া গ্রুপের শেষ ম্যাচে একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি পরিবর্তিত ব্রাজিল। নক আউট পর্বের কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই গ্রুপ পর্বের বাঁধা পেরুনো ব্রাজিল মূল একাদশেনর নয়জন খেলোয়াড়কে বদলী বেঞ্চে রেখে দল সাজিয়েছিলেন কোচ তিতে। ক্যামেরুনের গোলরক্ষক ডেভিস ইপাসির দুর্দান্ত ফর্মের কাছে টিকতে পারেনি তিতের দ্বিতীয় দলটি। ৯২ মিনিটে ভিনসেন্ট আবুবকরের গোলে আফ্রিকার অদম্য সিংহদের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত হয়। বিশ^কাপে কোন আফ্রিকার দলের কাছে এটাই ছিল ব্রাজিলের প্রথম পরাজয়। এই গোলের পরপরই জার্সি খুলে উদযাপন করতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছে আবুবকরকে। কিন্তু ততক্ষনে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে দলকে জয় উপহার দেয়া আবুববকর হাসিমুখেই মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। যদিও এই জয়ে গ্রুপ পজিশনের কোন হেরফের হয়নি। শীর্ষ দল হিসেবেই ব্রাজিল পরের রাউন্ডে উঠেছে। আর ঐতিহাসিক জয়কে সঙ্গী করে কাতার থেকে বাড়ি পথ ধরেছে ক্যামেরুন।
টানা নয় ম্যাচে জয়ের ধারা থেকে ছিটকে পড়া ব্রাজিলকে এখন উজ্জীবিত দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে নতুন করে ভাবতেই হচ্ছে। জায়ান্ট কিলার দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবার আগে গ্রুপ পর্বে এশিয়ান পরাশক্তির ম্যাচগুলোর খোঁজ খবরও নিচ্ছেন তিতে। সার্বিয়া ও সুইজার্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিল প্রথম দুই ম্যাচে জয়ী হলেও প্রত্যাশানুযায়ী দলের আক্রমনভাগ পারফর্ম করেনি। ভয়টা এখানেই, কারন কাউন্টার এ্যাটাক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে ইতোমধ্যেই নিজেদেও গতিময় ফুটবলের প্রমান দিয়েছে তাকে তাদেরকে আটকাতে তিতেকে নতুক ছক কষতে হচ্ছে। এনিয়ে বিশ^কাপে টানা পাঁচ ম্যাচে প্রথমার্ধে কোন গোল পায়নি ব্রাজিল। নিজেদের ফেবারিট তকমাকে শক্তিশালী করতে হলে এই ধারা থেকে অবশ্যই সেলেসাওদের বেরিয়ে আসতে হবে।
এনিয়ে টানা নবমবারের মত নক আউট পর্বে খেলতে যাচ্ছে ব্রাজিল। ৩২ বছর আগে শেষ ষোল থেকে বিদায় নিয়েছিল পাঁচবারের বিশ^ চ্যাম্পিয়নরা। ক্লদিও ক্যানেজিয়ার একমাত্র গোলে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত হবার সেই ম্যাচটি এখনো অনেকেই মনে গেঁথে আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামনে এখন ঐতিহাসিক অল-এশিয়ান কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার হাতছানি। ব্রাজিলের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া মাঠে নামার আগে দিনের শুরুতে আরেক ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মোকাবেলা করবে জাপান। শুক্রবার গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে রিকাডো হোর্টার পাঁচ মিনিটের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পর্তুগাল। কিন্তু এরপর পরপর দুই গোল দিয়ে ২০১৬ ইউরোপীয়া চ্যাম্পিয়নদেও হতাশ করে জয় ছিনিয়ে নেয় কোরিয়ানরা। নিষেধাজ্ঞার কারনে দলের দুর্দান্ত এই জয় স্ট্যান্ডে বসে দেখতে হয়েছে কোচ পাওলা বেনটোকে। এর আগে গ্রুপের আরেক শীর্ষ দল উরুগুয়ের সাথে গোলশুন্য ড্র করে টুর্ণামেন্ট শুরু করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। শেষ পর্যন্ত ঘানাকে ২-০ গোলে পরাজিত করে গ্রুপ পর্ব শেষ করেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে বিদায় নিতে হয়েছে উরুগুয়েকে।
এর আগে একবারই শেষ ষোলর পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিল এশিয়ান টাইগার্সরা। ২০০২ সালে ঘরের মাঠের বিশ^কাপে সেমিফাইনালে খেলেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সম্প্রতি ব্রাজিলের সাথে বিশ^কাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে।
কাতারে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই ব্রাজিলের দলীয় চিকিৎসকরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সেলেসাও চিকিৎসক রডরিগো লাসমার অবশ্য নেইমার প্রসঙ্গে ইতিবাচক আপটেড দিয়েছেন। গোঁড়ালির ইনজুরি কাটিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকেই নেইমারের খেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচে হাঁটুর সমস্যায় পড়া গাব্রিয়েল জেসুস ও এ্যালেক্স টেলেসকে বিশ^কাপে আর পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তিতে। যদিও টেলেস রিচারলিসনের কারনে সবসময়ই দলের বাইরেই থাকেন। টেলেসের ইনজুরি ও এ্যালেক্স সান্দ্রোর কোমরের সমস্যার কারনে লেফট-ব্যাক পজিশন নিয়ে দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন তিতে। তবে গোঁড়ালির সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন ডানিলো। এডার মিলিটাও রাইট-ব্যাক পজিশনেই থাকছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ান শিবিরেও ইনজুরি সমস্যা রয়েছে। হুয়াং হি-চ্যান পুরো টুর্ণামেন্টেই হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ভুগছেন। আগের ম্যাচেও বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে তিনি গোল করেছিলেন। তাকে আবারো মূল দলে পাওয়া না গেছে লি জায়ে-সুংই তার স্থানে খেলবেন। কাফ পেশীর সমস্যার কারনে পর্তুগালের সাথে মুল একাদশে ছিলেন না কিম মিন-জায়ে। কালকের ম্যাচে তার মূল দলে ফেরার আশা রয়েছে। লি কাং-ইন ও কিম ইয়ং-গুনও হালকা ইনজুরি সমস্যায় রয়েছেন। দলের তারকা স্ট্রাইকার সন হেয়াং-মিনের উপর আরো একবার ভরসা করতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়া। এবারের আসওে তিনি এখনো কোন গোল করতে পারেননি।
আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- jagobulletinbd@gmail.com