ঢাকামঙ্গলবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আবহাওয়া
  4. কর্পোরেট বুলেটিন
  5. কৃষি সংবাদ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. চাকরি
  9. জাতীয়
  10. জেলা সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. ধর্ম ও জীবন
  13. নাগরিক সংবাদ
  14. পদ্মাসেতু
  15. পাঁচমিশালি
আজকের সর্বশেষ সব খবর

জন্মদিনের শুভেচ্ছা

জাগো বুলেটিন ডেস্ক
আগস্ট ৬, ২০২২ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

শুভ জন্মদিন ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা গলাটা এক মূহুর্ত যেন বিহ্বল করে দিলো মাহিদ কে। কত বছর হবে এই গলা ও শোনেনি। অথচ এক সময় ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে অথবা হলে ফিরে গিয়ে কারণে অকারণে এই গলা ওকে সব সময় সঙ্গ দিতো।

মাহিদ দীর্ঘ সময় কিছু বলতে পারলো না। রমা শুভ জন্মদিন বলার পর একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কত শক্তি সঞ্চয় করে ওকে এত বছর পর কাজ টা করতে হয়েছে তা শুধু রমা জানে।

ওরা দুজনে দুজনকে ছেড়ে গেছে বললে হয়তো ভুল হবে বলতে হবে অনেক টা ইচ্ছে করে হারিয়ে ফেলেছিল। তাতে কতটা লাভ হয়েছে তার হিসাব নাই বা করা গেল।

ভালোবাসার মানুষ টি কে হারিয়ে রমা খুব ভেঙ্গে পরেছিল। তাই নিজের উপর অভিমান করে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে পাড়ি দিয়েছিল সেই সুদূর আমেরিকায়। সেই থেকে কিছু টা নিজের উপর জেদ থেকে সামনের পথ টাকে আরো একটু এগিয়ে নিয়ে গেছে।

দীর্ঘ দিন একা থাকার পর ওর জীবনের মোড় হঠাৎ করে ঘুরিয়ে দিয়ে হঠাৎ বৃষ্টির মত নাবিলের আগমন। কথা খুব কম বলে মূখে তবে চোখের ভাষা ছিল খুব প্রখর। কিভাবে যেন সেই চোখের ভাষায় রমার রঙবিহীন জীবনের কি যেন একটা করে সব এলোমেলো করে দিয়ে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়ে ছিল প্রিয় বন্ধু হয়ে। সেই থেকে আবারো ভালোবাসার পথ চলা রমার।

আত্মীয় পরিজন হীন জীবনে শ্রাবণের বাদল ধারা হয়ে রমার মনের আকাশ থেকে মাটি চাপা সরিয়ে আবার ভালোবাসার জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল।তারপর ওরা আর আলাদা হয়নি‌ । দু ‘জন প্রিয় বন্ধু হয়ে রয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপে।

বাবা-মা রমার এই দেশ ছেড়ে যাওয়াকে সহজে মেনে নিতে পারেননি জীবনদশায় তাই খুব একটা যোগাযোগ হতো না রমার বাংলাদেশের সাথে। বাবা খুব রাগী মানুষ ছিলেন। রমার বিয়ে না করাকে তিনি কিছুতেই মানতে পারেননি। তাই অবাধ্য মেয়ের মুখ শেষ পর্যন্ত দেখতে চাইনি।মাতো ওর আমেরিকা যাওয়ার পর পর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। তাই আর ওর দেশে আসার কোন আগ্রহ ছিল না। তাছাড়া ভাই বোনেরা চাইতো না ও দেশে ফিরে আসুক।

কিন্তু সেই বাবা মারা যাওয়ার আগে অদ্ভুত এক কান্ড ঘটিয়ে গেছেন। তার বড় সন্তানকে বিষয় আশয় ইউইল করে দিয়েছেন এবং একটি সংস্থার মাধ্যমে সেই সম্প্রতি ব্যয় হবে তা বয়ান করেছেন। তার দায়িত্ব বড় কন্যা রমাকে নিতে অনুরোধ করে গেছেন একটি চিঠির মাধ্যমে। অন্য দুই ভাই বোন বিস্মিত হলেও বাবার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে বড় বোনকে বিষয়টি অবগত করেছে সময়মত।

রমা মূলত সেই উপলক্ষে দেশে এসেছে। ময়মনসিংহ শহরে পা দিয়ে মনে হচ্ছে অচেনা একটা শহর ওকে হাতছানি দিচ্ছে। চেনা পথ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ওর রেখে যাওয়া সব জিনিস ওর মা খুব যত্নে রেখেছিল তা আজো একটি আলমারি তে বন্দি হয়ে আছে। ছোট যখন চাবিটা দিলো রমার তখন অস্থির লাগছিল। তবুও হাত বাড়িয়ে নিয়ে অনেক সাহস করে তালা খুলে কত বছরের ওর প্রতিদিনের ডাইরি খুলে ছয় আগষ্ট লেখা পাতায় গিয়ে ওর চোখ আটকে গেল। ছোট করে লেখা শুভ জন্মদিন মাহিদ। ততদিনে ও মাহিদ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। আর সবুজ কালিতে লেখা ফোন নাম্বার।

রমা আজ আবারো ঐ নাম্বারে ফোন দিয়ে নিজেয় চমকে গেছে। ফিরে যেতে হয়েছে সেই ব্রহ্মপুত্রের পাড়,ছায়া সুনিবিড় পথ আর জব্বারের মোড়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেল স্টেশন। বিশেষ করে বিকাল বেলাটা তিস্তা এক্সপ্রেস যখন হুস করে রেললাইন কাপিয়ে ছুটে চলতো তখন রমার এলোমেলো খোলা চুলে মাহিদ আলতো করে ছুঁয়ে দিতে দিতে ওর প্রিয় কোন গানের কলি ভাঁজতে থাকতো। চোখ বন্ধ করলেই রমা সেই দিনগুলো তে আজো ফিরে ফিরে যাই।

মাহিদ ঘোর কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলো রমা, এতদিন পর তুমি? আমার জন্মদিনের কথা এখনো তোমার মনে আছে? এত বড় একজন বিখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী আজো আমার মত সাধারণ একজন চাকুরীজীবীকে মনে রেখেছে? আরো অনেক প্রশ্ন হয়তো মাহিদ রমাকে করতো কিন্তু রমা থামিয়ে দিয়েছে। ছোট একটি প্রশ্ন করে ? তুমিতো শুনছি ময়মনসিংহ শহরের পাশেয় থাকো, সময় করে এখনো বিকালে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময় জব্বারের মোড়ে যাও? সাথে তখন কাকে নিয়ে যাও?

মাহিদ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে রমাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময় দূরে সরে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। রমার রাশভারী বাবা রমার অগোচরে যেদিন ডেকে পাঠিয়েছিল সেদিন ওভাবে ওকে সরে যেতে হবে মাহিদ কখনো ভাবিনি। রমার বাবা ছাড়া সেদিন বাড়িতে আর কেউ ছিল না ময়মনসিংহ শহরের পাশে কোন এক নিকট আত্মীয় বাড়িতে সবার দাওয়াত ছিল ওদের।

সেদিন কি ঘটেছিল তা আজো স্পষ্ট মনে আছে মাহিদের।অস্থির মাহিদ বাড়ি ফিরে গেলে মা মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। মা জানতো পুরো বিষয়টি। কারণ মাকে আগেয় জানানো হয়েছিল। ছেলে যথেষ্ট বড় হয়েছে তাই তার জীবন তাকে ভাবতে দিয়ে দূর থেকে দেখে যাচ্ছিলেন মা। অদ্ভুত প্রাণশক্তি ছিল মায়ের ‌। সব কিছু জানতেন তবে তা নিয়ে অস্থির হতেন না।

বাড়িতে ছোট খালার মেয়ে ময়না এলো ঠিক সেই সময় কলেজে ভর্তি হতে। পড়তে হলে শহরে আসতে হবে তাই মা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ময়না এখন থেকে এই পরিবারের সাথে থেকেই লেখাপড়া করবে।সদ্য কৈশোর পেরুনো মেয়েটা সারা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ করে মাতিয়ে তুলতো‌। মা মনে মনে আস্কারা দিতো।

কৃষি কর্মকর্তা চাকুরী হয়ে যাওয়ার পর মায়ের ইচ্ছাতেই মাহিদ ময়নাকে পাকাপাকি ভাবে ঘরে রেখে দিয়েছে। ওদের মধ্যে সুখের কোন খামতি নেই। একটা পুতুলের মত মেয়ে আছে ওদের ‌নাম ময়না রেখেছে ইরাবতী।

এমন সময় রমার শুভ জন্মদিন বলা কেমন যেন অস্থির করে তুলেছে মাহিদকে। কেন রমা এত বছর পর এভাবে ওকে নাড়া দিলো মাহিদ বুঝতে পারছেনা। বেশ তো আপন জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে দেশ বিদেশ কাঁপিয়ে যাচ্ছে। ভাল থাক না ও ওর পৃথিবীটা নিয়ে ‌! মাহিদের অনেক কষ্ট করে ভালোবাসার চাঁপা দেওয়া কবরে তবে কেন এই ফুলের মালা দেওয়ার কি দরকার তা একদম বুঝতে পারছে না মাহিদ।

লেখক : ফারজানা রহমান এ্যানি

শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি জাগো বুলেটিনকে জানাতে ই-মেইল করুন- news.jagobulletin@gmail.com